রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে নতুন সশস্ত্র সংগঠন ‘কুকিচীন পার্টি’র হামলায় তিন গ্রামবাসী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আতুমং মারমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একই দাবি করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওয়েইবার ত্রিপুরা।
তবে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আতুমং মারমার ভাষ্য, ‘মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ‘কুকিচীন পার্টি’ নামের একটি নতুন সশস্ত্র সংগঠনের কর্মীরা বড়থলি ইউনিয়নের সাইজান নতুন পাড়ায় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে ঘটনার ২২ ঘণ্টা পরও বুধবার (২২ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেউ ঘটনাস্থলে যাননি।’
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বৃষচন্দ্র ত্রিপুরা, সুভাষ ত্রিপুরা এবং ধনরা ত্রিপুরা। এদের মধ্যে সুভাষ এবং ধনরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আতুমং মারমা।
ঠিক কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টার পায়ে হাঁটার দূরত্বে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।
একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি মেম্বার ওয়েইবার ত্রিপুরাও ঘটনার জন্য কুকিচীন পার্টিকে দুষছেন। তিনি বলেন, নতুন সৃষ্ট ওই পাড়াতে মাত্র তিনটি পরিবারই বসবাস করতো। এলাকাটি খুবই দুর্গম।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহমুদা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে পৌঁঁছানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। তাই আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।’
বক্তব্য জানতে বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘বড়থলির ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি জানানোর পর আমি বিলাইছড়ি থানাকে জানিয়েছি। এলাকাটি এতই দুর্গম যে সেখানে বিলাইছড়ি থেকে তিনদিন, পার্শ্ববর্তী রুমা উপজেলা থেকে যেতেও দুদিন সময় লাগে। পুরো বিষয়টি রুমা জোনকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।’
এদিকে ‘কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ’ নামের সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।
সংগঠনটির ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপালনকারী হিসেবে দাবি করা কর্মকর্তা লে. কর্ণেল সলোমন ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘কেএনএফের স্পেশ্যাল কমান্ডো ফোর্স হেড-হান্টার টিম সন্ত্রাসী জেএসএসের সশস্ত্র বাহিনী জেএলএর জাইজাম বেসমেন্ট ক্যাম্পে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে জেএলএ বাহিনীর তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। তবে আহত অবস্থায় ট্রেইনিসহ অন্যরা সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।’
তবে এ পেজ বা সংগঠনটি সম্পর্কে বিস্তারিত ও নিশ্চিত কোনো তথ্য বা সূত্র জানা যায়নি।
নদী বন্দর/এসএফ