২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্বের ২০৩টি দেশে ৭৫১টি পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদে এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের (জামালপুর-৫) লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে। আর জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে।
আরেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহম্মদ সিরাজের প্রশ্নে টিপু মুনশি জানান, বাংলাদেশের ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৩৬৭ দশমিক ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ৬১ হাজার ৬০৯ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানির পরিমাণ ছিল। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৬ হাজার ২৪২ দশমিক ০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে, প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো হলো নিটওয়্যার, ওভেন পোশাক, হিমায়িত মাছ, হিমায়িত চিংড়ি, হাঙ্গরের পাখনা, শুটকি মাছ, লবণযুক্ত মাছ, পশুর নাড়িভুঁড়ি, শাকসবজি, আলু, ফল, নারিকেল, সুপারি, শুকনা মরিচ, হলুদ, সরিষা, সয়াবিন-নারিকেল ও সরিষার তেল, তামাক, কফি বিনস, আদা, ধনিয়া, মধু, মসলা, চাল, শুকনা খাদ্য, বিস্কুট, জ্যাম, জেলি ও ফ্রুট জুস।
রপ্তানি করা আরও পণ্য হলো সস, চা, কাঁচাপাট, মাংস, কাঁকড়া, কনডেন্সড মিল্ক, মানুষের চুল, হাঁসের পালক, পশুর হাড়, শিং, খুর, তাজা ফুল, বাঁশের খুঁটি, চিনি, চিটা গুড়, মিনারেল ওয়াটার, হুইস্কি, কয়লা, সি শেল, ছোবড়া ও ছোবড়া জাত পণ্য, ঝিনুক, মুক্তা, ন্যাপথা, ফার্নেস ওয়েল, ফার্মাসিটিক্যালস, রাসায়নিক সার, পিভিসি পাইপ, পিডিসি ব্যাগ, পলিথিন সিট, প্লাস্টিক হ্যাম্পার, সিনথেটিক রোপস, প্লাস্টিকের বর্জ্য, সিমেন্ট, প্রসাধনী, সাবান, রাবার, মণ্ড, কাগজ, গ্লাস সিট, জিলোটিন, চামড়া, জুট ইয়ান, জুট টুয়াইন, জুট কারপেট, জুট ম্যানুফাকচারার্স, সিল্ক ফেব্রিক্স, কাঁচা তুলা, সুতি কাপড়ের বর্জ্য, কটন সূতা, পলিয়েস্টার ফ্রেড, অ্যাকরেলিক ইয়ার্ন, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, হস্তশিল্প, টেরি টাওয়েল, হোম টেক্সটাইল, পাদুকা (চামড়া), পাদুকা (পাট), পাদুকা (স্পোর্টস), সিরামিকের ইট, সিরামিক টাইলস, সিরামিক স্যানিটারি ওয়্যার ও সিরামিক টেবিল ওয়্যার।
এছাড়া এমএস রড, জিআই পাইপ, আয়রন চেইন, কাস্ট আয়রন আর্টিকেল, তামার তার, মেশিনারিজ, ইলেকট্রিক ফ্যান, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, ড্রাইসেল ব্যাটারি, টেলিফোন সেট, বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন ক্যাবলস, কার্বন রড, বাইসাইকেল, লাইট ফিটিংস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, জিঙ্ক ওয়াল্ট, বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস, অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, টেলিভিশন সেট, সার্কিট ব্রেকার্স/বোর্ড, ইনডিকেটর ল্যাম্প, কম্পিউটার সফটওয়্যার, সিগারেট, মোমবাতি, ফিচার ফিল্ম, মেলামাইন টেবিলওয়্যার, চামড়ার ব্যাগ ও পার্টস রপ্তানি করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রীর তথ্যমতে আরও যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, চামড়ার তৈরি হার্ভ গ্লাবস, পার্টিকেল বোর্ড, করোগেটেড কার্টুন, কাঠের ফ্রেম, প্রিন্টেড পণ্য, স্টেশনারি সামগ্রী, জামদানি শাড়ি, কম্বল, বস্তা ও ব্যাগ, তাঁবু, মশারির কাপড়, টুপি, ছাতা, পরচুলা, প্রাকৃতিক পাথর, ছোট প্লাস, জুয়েলারি, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী, ব্লেড, স্টেলনেস স্টিলের তার, অ্যাকিউমুলেটর ব্যাটারি ও পার্টস, ফেরি বোট, ক্যামেরা পার্টস, দেওয়াল ঘড়ি, কাঠের আসবাবপত্র, খেলনা, গল সেফট, ঝাড়বাতি, টুথব্রাশ, জিপার, বলপেন, মিউজিক্যাল যন্ত্রাংশ, অ্যালুমিনিয়াম স্ট্রাকচার, উপহার সামগ্রী, চামড়ার তৈরি ফেব্রিক্স, হ্যান্ড গ্লাভস (রাবার) ও জাহাজের তৈরি যন্ত্রাংশ। এসময় মন্ত্রী বলেন, আম, পান, আলু ও শাকসবজিও প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে।
সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর প্রভাব পড়ায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এ যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারেও দেখা যাচ্ছে ঊর্ধ্বগতি।
তিনি জানান, সরকার নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখার জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে তিন হাজার ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএফ