টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে উয়ার্শী নদীতে একটি সেতুর অভাবে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। উয়ার্শী ইউনিয়নের নাগরপাড়া-কহেলায় বয়ে চলেছে ধলেশ্বলীর একটি শাখা উয়ার্শী নদী। এ নদীতে একটি সেতু না থাকায় মির্জাপুর, নাগরপুর, ঢাকার ধামরাই ও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বর্ষায় নৌকা, শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর শুকিয়ে গেলে হেঁটে নদী পার হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এলাকাবাসী জানায়, নদীটির উত্তর পাশে মির্জাপুরের নাগরপাড়া ও দক্ষিণে কহেলা, নতুন কহেলা, চন্দনতারা, মস্তফাপুর এবং আরোহা গ্রাম। দক্ষিণপারের কহেলা গ্রামে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুক ও এ আসনের বর্তমান এমপি খান আহমেদ শুভর বাড়ি। এ আসনে মো. একাব্বর হোসেন টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হলেও উয়ার্শী নদীর নাগরপাড়া-কহেলা এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ যায়নি।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নাগরপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় নৌকায় পার হতে হয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। খেয়া নৌকায় নদী পার হতে গিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লিলিমা আক্তার নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী নৌকাডুবিতে মারা যান। নদীর উভয়পাশের মানুষকে মির্জাপুর সদর, টাঙ্গাইল, নাগরপুর, মানিকগঞ্চ, ধামরাই ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এর জন্য নদীটি পাড়ি দিয়ে নাগরপাড়া বাজার এবং কহেলা গ্রাম থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করতে হয় তাদের। ব্রিজ না থাকায় এমন অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে।
নদীর উত্তর অংশে রয়েছে নওগাঁও (নবগ্রাম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি কিন্ডারগার্টেন, উয়ার্শী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উয়ার্শী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, নাগরপাড়া বাজার। আর দক্ষিণ অংশে রয়েছে আতুল্যা বাজার, উয়ার্শী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন কহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দনতারা-মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উয়ার্শী পাইকপাড়া এম ইয়াছিন অ্যান্ড ইউনুস খান উচ্চ বিদ্যালয়, সিয়াম একাডেমি কিন্ডারগার্টেন ও নতুন কহেলা কলেজ।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্রিজের অভাবে কৃষকরা সময়মতো তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
খেয়া নৌকার মাঝি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ৪০ বছর ধরে এ ঘাটে নৌকা চালাচ্ছেন। নদীটি শুকিয়ে গেলে লোকজন হেঁটে এবং বর্ষায় নৌকায় চলাচল করে। তিনি প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ মোটরসাইকেল পার করেন। পারাপারের জন্য তিনি জনপ্রতি ৫ টাকা, মোটরসাইকেল ও রিকশা-ভ্যানের জন্য ১০ টাকা করে নেন।
নাগরপাড়া-কহেলা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ধামরাই উপজেলার কাওয়ালীপাড়া এলাকার অটোচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, নাগরপাড়া এলাকায় ব্রিজ না থাকায় দেওলীপাড়া ব্রিজ হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে নাগরপাড়া আসতে হয়।
নাগরপুর এরাকার বাসিন্দা এবং একটি এনজিওর ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহীম মিয়া জানান, মো. একাব্বর হোসেন টানা চারবার এমপি থাকার পরও এখানে ব্রিজ হয়নি। বিষয়টি এলাকাবাসীর জন্য খুব কষ্টের।
কহেলা গ্রামের ভ্যানচালক মনির হোসেন বলেন, নদীতে ব্রিজ থাকলে ৫ মিনিটে নাগরপাড়া বাজারে আসা যেতো। নদী শুকিয়ে গেলে ৪/৫ জন মিলে ভ্যান ধাক্কিয়ে এবং বর্ষা মৌসুমে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। ব্রিজ না থাকায় আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে। মালামাল নিয়ে একবার পার হলে মনে হয় জীবনটা বের হয়ে যাবে। আমাদের গ্রামের ছেলে খান আহমেদ শুভ এবার এমপি হয়েছেন। আশা করি তিনি আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে ব্রিজ তৈরি করে দেবেন।
উয়ার্শী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান সুফল বলেন, নাগরপাড়া খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। ব্রিজটি নির্মিত হলে মির্জাপুরের মানুষের পাশাপাশি ধামরাই, সাটুরিয়া ও নাগরপুর উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না।
নতুন কহেলা কলেজের প্রিন্সিপাল ইমাম হোসেন মো. ফারুক বলেন, বর্তমানে কলেজে ৮৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লিলিমা আক্তার নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী নাগরপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় নদী পার হতে গিয়ে নৌকা ডুবে মারা যায়। নদীর দক্ষিণ পাশে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়। দক্ষিণ মির্জাপুরবাসীর একটাই দাবি- নাগরপাড়া খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ।
টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ বলেন, উয়ার্শী নদীর নাগরপাড়া-কহেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী বন্দর/এসএফ