সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো বহু এলাকা নিমজ্জিত। সুরমা-কুশিয়ারার পানি এখনো সিলেটের চার পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপরে। এদিকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের (ইউএন) রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর জিন লুইস বলেছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। উপদ্রুত এলাকায় ৬০ হাজার প্রসূতি ও বহু শিশু দুর্ভোগে রয়েছে। অবকাঠামোগত ও সম্পদেরও ক্ষতি হয়েছে। তারা সমন্বিত অ্যাসেসম্যান্টের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের পাশাপাশি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত কিছু এলাকা পরিদর্শন করে গত শনিবার রাতে সিলেট শহরতলীর গ্র্যান্ড সিলেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিন লুইস আরো বলেন, সিলেটে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। আগামী দিনে আরো বন্যা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
অন্য দিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন বিশেষ করে নিঃস্ব মানুষেরা কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নাই। বহু বাড়িঘর স্থাপনা, গৃহস্থলী জিনিসপত্র এমনকি থালা-বাসন, কাথা-বালিশ, শিক্ষার্থীদের বইপত্র সব ভেসে গেছে। এই দুই জেলার অন্তত দেড় লাখ লোকের চাল-চুলা কিছুই নেই। তারা অন্যের আশ্রয়ে অথবা শূন্য ভিটায় মাথা চাপড়িয়ে কাঁদছে।
খোদ বিভাগীয় শহরের কাছেই দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জলমগ্ন। কুশিয়ারা নদীতে পানি বেশি থাকায় ঐ এলাকার পানি নামতে পারছে না। ফলে অনেক স্থানে গত ১৯ দিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান পাট বন্ধ। সিলেটের পানি সুনামগঞ্জ দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জেও পানি বেশি।
পানি নামতে সময় লাগছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তরা। সোমবার বিকাল ৩টায় কানাইঘাটে সুরামা বিপত্সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার, অমলসিদে কুশিয়ারা ৮১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গৃহনির্মাণ খাতে ১০ কোটি টাকা প্রদান : সরকার থেকে সিলেট জেলার ৫ হাজার পরিবারের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে গৃহনির্মাণ বাবদ। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই টাকা বিতরণ। জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সিলেটে ৫ কোটি টাকা অনুদানের চেক পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫ লাখ পরিবারের ৩০ লাখ মানুষ ছিলেন পানিবন্দি। এখনো বন্যা পরিস্থিতি থাকায় বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরো ৭০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদ বিতরণের জন্য প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, গত ১৪ জুন শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও পাঁচটি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হওয়া ছাড়াও প্রাণহানি হয়েছে ১০ জনের। এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পরিস্থিতি :উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে জেলা সদরসহ ১২টি উপজেলা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনরায় নির্মাণের জন্য ৫ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।
বর্তমানে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও এখনো বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে। পানি কিছুটা কমলেও অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না। অনেকের বাড়িঘর বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবার অনেকের ঘরবাড়ি বানের স্রোতে ভেসে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে কোথায় গিয়ে থাকবেন তারা সেই দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে তাদের। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে চারটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার তাণ্ডবে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৮৮টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৪৫ হাজার ২৮৮টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।
নদী বন্দর/এবি