বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। এদিকে পূর্নিমার জোয়ের প্রভাবে নদ-নদীর পানির উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নিন্মাঞ্চল।
এদিকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুই দফা ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবশে করে প্লাবিত হয়েছে জেলার কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে মানবেতর জীবন পার করছে অনেক পরিবার। এছাড়া পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে যে কোনো সময় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই পটুয়াখালীর পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাছধরা ট্রলার সমূহকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ‘কষ্ট করতে করতে এহন সহ্য হয়ে গেছে। অমাবশ্যা কিংবা পূর্নিমায় জোয়ারের চাপ একটু বেশি হইলেই আমাদের এখানের গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যায়। জমি আর চাষ উপযোগী থাকে না।’
চম্পাপুর ইউনিয়নে দেবপুর গ্রামের কৃষক শাহালম মিয়া বলেন, ‘তিন থেকে চার বছর আগে আমাদের এখানের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। প্রতি বছর এই মৌসুমে পানি ওঠা নামা করে। আমাদের ঘর বাড়ি তলিয়ে যায়। এমনকি আমাদের রান্না বান্না চলে না। নিদারুন কষ্টে দিন চলে।’
আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঝড়ের কবলে পরে সাগরে তিনটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নিখোঁজ রয়েছে ১০ থেকে ১২ জন জেলে। শিববাড়িয়া নদীতে সহস্রাধিক মাছধরা ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে।’
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ‘নদ-নদীর পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা এই অবস্থা চলমান থাকবে।’
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, ‘লালুয়ার ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে। ইতোমধ্যে তারা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আর আমার ওই এলাকার ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবো। ইতিমধ্যে আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আর দেবপুরের দেড় কিলোমিটার বাঁধ গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাদের জমির উপর বাঁধ করতে দেয়নি। তবে জমি একর করে ওখানে বাঁধ নির্মান অনেক সময়ের ব্যাপার।’
তিনি আরো জানান, ‘তারপরও যদি স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওখানে এমার্জেন্সি বাঁধ নির্মাণ করা হবে।’
নদী বন্দর/এসএস