ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দিকনগর খেয়াঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অস্থায়ী রক্ষা বাঁধের সাড়ে ৭০০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প ‘স্বপ্ননগর’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৫৩ একর জমির ওপর নগরের সব সুবিধা নিয়ে ‘স্বপ্ননগর’ নামে আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়। যাদের জমি নেই, ঘর নেই এমন ২৮৬ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাট, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন। এছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর।
এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৯০০ মিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু হঠাৎ করে মধুমতি নদীতে পানি বাড়ায় বাঁধের প্রায় সাড়ে ৭০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩০ ঘর ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, সিরাজুল ইসলাম শরীফ, হুরি বেগম বলেন, ‘আমরা মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে স্বপ্ননগরে একটু আশ্রয় পেয়েছিলাম। এখন এ আশ্রয় হারালে আমাদের আবার পথে পথেই থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে, সেই ঘরে শান্তিতে বসবাস করছি। নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাবো। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
দিকনগর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘মধুমতিতে পানি বেড়েছে। কয়েকদিনে অস্থায়ী বাঁধের প্রায় সাড়ে ৭০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই বছর যেতে না যেতেই রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বাসিন্দারা এখন ঘর হারানো আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. কুদ্দুস বলেন, ‘অস্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইনামুল হাসান বলেন, চলতি বছরের কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অস্থায়ী বাঁধ এলাকায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়। গত কয়েকদিনে মধুমতি নদীতে পানি বেড়েছে। ফলে ভাঙনও বাড়ছে। চর কাতলাসুর স্বপ্ন নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনের অংশের মধুমতি নদী অস্থায়ী রক্ষা বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নদীতে চলে গেছে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, মধুমতির এ ভাঙন নিয়ে বহুবার জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় বলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী শাসন না করায় এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার স্বপ্ননগর হুমকির মুখে পড়েছে। গত বছরের জুন মাসে আপদকালীন প্রকল্পের আওতায় রক্ষা বাঁধের কাজ করা হয়। যা গত কয়েকদিনে বেশিরভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। ভাঙ্গন রোধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটিই প্রত্যাশা করি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল হক বলেন, হঠাৎ নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙন বেড়েছে। নদী অস্থায়ী রক্ষা বাঁধের বেশিরভাগ এলাকা এখন নদীতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, মে মাসে আপদকালীন (ইমারজেন্সি) প্রকল্পের আওতায় মধুমতি নদীর অস্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ করা হয়। যা গত জুন মাসে সমাপ্ত হয়। নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। নদীর পানি কমলে নতুন করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী বন্দর/এসএইচ