একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দীর্ঘ ৫১ বছরেও আদায় হয়নি। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। তিনি এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বাসুগ) এবং প্রজন্ম ৭১ ও আমরা একাত্তর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী হিলাল ফয়েজী। বক্তৃতা করেন গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ও শহীদ সন্তান প্রদীপ কুমার দত্ত, প্রজন্ম ৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনীর প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীতে এত স্বল্প সময় এত বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যার রেকর্ড নেই। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে ও সারাদেশে ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়েছে। দুই লক্ষ মা বোনের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তাই ওই গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ৯ ডিসেম্বরের পাশাপাশি ২৫ মার্চকেও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা দিতে হবে। ‘
জাতিসংঘের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা বিরোধীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচার শুরু করেছে। রাজাকার-আলবদরদের তালিকা তৈরির জন্য সংসদে আইন পাস হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলগুলোর নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন বাতিল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ‘
মূল বক্তব্যে হিলাল ফয়েজী বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠন একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করছে। যে কাজের কারণে প্রবাসীদের সহায়তায় এ বছর অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেণ্ডা হিসেবে বাংলাদেশের জেনোসাইডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য জনমত গড়ে তুলতে ৯দিনের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। ‘
এ সময় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচী পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর ‘জেনোসাইড স্বীকৃতি আদায় সপ্তাহ’ ঘোষণা করা হয়। এই সপ্তাহকে সামনে রেখে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আগামী ৩ অক্টোবর বিকেল ৩টায় জেনেভাস্থ জাতিসংঘ ভবনে আলোচনা আয়োজন করা হবে। এর আগের দিন ২ অক্টোবর বিকেল ৪টায় নিউইয়র্ক জাতিসংঘ ভবন ও লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে, সিডনি শহর এবং কানাডার টরোন্টো ও মান্ট্রিলে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তাহজুড়ে জেলায় জেলায় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন এবং বধ্যভূমিগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নদী বন্দর/এসএইচ