করোনা টিকার অ্যাপস তৈরিতে ৯০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অ্যাপসটি তৈরি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ওই সংবাদকে অসত্য উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি বিব্রত ও দুঃখ পেয়েছেন।
শনিবার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে ডিজিটাল বাংলাদেশের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। পলক বলেন, আমাদের নিজেদের লোকরাই এই অ্যাপ তৈরি করছে। তাই এক টাকাও দাবি করিনি। এ সময় সরকারের অন্তত ৫০০ অ্যাপস রয়েছে যার সিংহভাগই অব্যবহৃত থাকছে। এসব অ্যাপ তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ। তাই এখন থেকে অ্যাপ তৈরির আগে প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন পলক। এ সময় বাংলাদেশে পেপ্যাল চালুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, পেপ্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে কবেনাগাদ চালু হবে তা স্পষ্ট জানাতে পারেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চিত্র তুলে ধরে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, চলতি বছরেই দেশের সব নাগরিককে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনবে সরকার। একই সঙ্গে ডিজিটালাইজড হবে ৯০ শতাংশ সরকারি সেবা। ফলে সেবার পেছনে ছুটবে না মানুষ, সেবা পৌঁছে যাবে মানুষের হাতের মুঠোয়। এ সময় তিনি আরো জানান, বিগত ১২ বছরে আইসিটি খাতে ১৫ লাখ দক্ষ মানবসম্পদ চলতি বছর শেষে দেশের আইসিটি খাতে সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ লাখ।
২০০৮ সালে আইসিটি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ছিল ৫০ হাজারের কম। ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৫৬ লাখ। সরকারি ওয়েবসাইট ছিল ৫০-এর কম। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজার ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার। অথচ ১২ বছর পূর্তিতে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৫ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইট সংখ্যা ৫১ হাজারের বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজার বর্তমানে এক বিলিয়ন ডলার। শুধু এই করোনায় ১০ লাখের বেশি ফাইলের কাজ অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে।
পলক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ২ হাজার সরকারি সেবাকে ডিজিটালাইজড করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৯৬৪টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে এবং আরও এক হাজার ৮৬টি সেবা রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার অফিসের কার্যক্রমে কাগজ ও কালমের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ই-অফিস কার্যক্রম চালু করেছে। এই অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সরকারি অফিসে কাজের গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আনয়নে ই-নথি চালু করা হয়। বর্তমানে ৮ হাজারেরও বেশি অফিসের প্রায় ৯০ হাজারেরও অধিক কর্মকর্তা ই-নথি ব্যবহার করছেন। এখন পর্যন্ত এক কোটি ৪৩ লাখ ফাইল ই-নথি সিস্টেমের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬ হাজার ৭৯০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৮৫ লাখ মানুষকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। দেশে ৩৯টি হাইটেকও আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টির নির্মাণ শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম Tier-IV ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো তৈরি হওয়ার কারণে করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগ, দাফতরিক কাজকর্ম, চিকিৎসাসেবা সবকিছুই চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। সরকার করোনা পোর্টাল, কোভিড ট্রেসার, কোভিড ১৯ ট্রাকার, ফুড ফর ন্যাশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে ১৫টিসহ মোট ৭ হাজার ৭২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে। আরও ৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শিক্ষা ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার দক্ষ মানুষ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্লকচেইন, রোবোটিকস, এআই, এআর, ভিআর, ক্লাউড কম্পিউটিং, থ্রিডি প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। গড়ে তোলা হচ্ছে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি। স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য ৪৪টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের ১১৮ জন স্টার্টআপ প্রতিনিধিকে কো-ওয়ার্কি স্পেস বরাদ্দ এবং ১৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরি করা হয়েছে।
নদী বন্দর / জিকে