অর্থ পাচার করে কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা বেগমপাড়াকে ইঙ্গিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশে আমাদের বড় বড় বাড়ি আছে। এটার ভালো দিক হলো, আমরা বেশ সক্ষম হয়ে গেছি। মন্দ দিক হলো, যাওয়ার আগে যদি আমাদের পাওনাটা দিয়ে যেতেন, তাহলে কোনো আপত্তি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যে আয় হয়, তার একটা অংশ জনগণ পায়। কারণ সার্বিক উপার্জন করার পরিবেশ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমরা দিয়েছি। এই হকটা যদি এক টাকায় এক পাই হয়, দিয়ে দেন। বাকি ৯৯ পয়সা নিয়ে যান। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, সুখে খান। কিন্তু, তা না করে এটা তো নেনই, বরঞ্চ ব্যাংক থেকে যে পুঁজিটা (ঋণ) নিয়েছিলেন, সেটা সুদ্ধ (সহ) নিয়ে চলে গেলেন!’
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ‘ব্যাংকিং পলিসি অব বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এম এ মান্নান বলেন, ‘চারদিকে আপনারা যে উন্নয়নের পরিচয় দেখছেন, সাঁকোর দেশে পদ্মা সেতু, সাঁকোর দেশে বঙ্গবন্ধু সেতু, সাঁকোর দেশে টানেল। এগুলো বিশাল অর্জন আমাদের জন্য। সব রেললাইনকে আমরা ডাবল ট্রাক করবো। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের প্রায় বৃহদাংশ করে ফেলেছি, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ প্রায় হয়ে গেছে। এটা ডাবল ট্র্যাক হয়ে যাবে। ডুয়েলগেজ করবো আবার। বিশাল পরিকল্পনা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। রূপপুর যে পারমাণবিক প্রকল্প, এটা প্রযুক্তির দিক থেকে অত্যন্ত অত্যাধুনিক। আকাশে আমাদের স্যাটেলাইট উড়ছে, এটা আমি নিজেও কখনো ভাবিনি যে, এটা সম্ভব হবে আমাদের দিয়ে। প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উড়ছে, দ্বিতীয়টাও উড়বে।’
উন্নয়নের আড়ালে বৈষম্য বাড়ছে বলে স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এসবের আড়ালে আমাদেরকে দোষারোপ করা হয়, উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার ছিল, এখন হয়তো ২২ হাজার পরিবার আছে। হতে পারে, আমার হাতে হিসাব নেই। বৈষম্য বাড়ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশে আমাদের বড় বড় বাড়ি আছে। এটার ভালো দিক হলো যে, আমরা বেশ সক্ষম হয়ে গেছি। যেসব জায়গায় আমরা যেতাম ধোয়া-মোছার জন্য, এখন আমরা নিজেরাই মানুষকে সেখানে কাজে লাগাচ্ছি। এটা একটা ভালো দিক। মন্দ দিক হলো যাওয়ার আগে যদি আমাদের পাওনাটা দিয়ে যেত, তাহলে কোনো আপত্তি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যে আয় হয়, তার একটা অংশ জনগণ পায়। কারণ সার্বিক উপার্জন করার পরিবেশ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমরা দিয়েছি। এই হকটা যদি এক টাকায় এক পাই হয়, দিয়ে দেন। বাকি ৯৯ পয়সা নিয়ে যান। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, সুখে খান। কিন্তু তা না করে এটা তো নেনই, বরং ব্যাংক থেকে যে পুঁজি (ঋণ) নিয়েছিলেন, সেটা সহ নিয়ে চলে গেলেন। মাঝে মাঝে খবরের কাগজে এতো রোমাঞ্চকর গল্প ব্যক্তি সম্পর্কে উঠে আসে যে, এতগুলো বান্ধবী, এতগুলো বাড়ি, এতগুলো গাড়ি। এগুলো শুনলে আমার হাত-পা কাঁপে। কিন্তু এটা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক, সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে।’
এখন দেশের উচ্ছ্বাসের সময়, এ সময় নানা ধরনের বাড়াবাড়ি হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং আইন যেন প্রয়োগ করতে পারি। আইন যেহেতু আছে, ভয়ের কিছু নেই।’
অনেক সময় কেউ কেউ বলে ‘কথা বলার স্বাধীনতা নেই’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন না, আমার দীর্ঘ জীবনে এতো পত্রিকা আমি জীবনে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন আমার অফিসে নতুন নতুন কাগজের সাংবাদিক ভাইয়েরা আসেন। কেউ বলে সকালের খবর, দুপুরের খবর, বিকালের খবর, রাতের খবর, সন্ধ্যার খবর, শেষ রাতের খবর- নানা ধরনের নামে। আমার আপত্তি নেই। আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এখন মানুষকে পত্রিকা পড়তে দেখছি না, কম পড়ে আগের তুলনায় বা আমি নিজেও পড়ি না। সেখানে কাগজগুলো কোথায় বিক্রি হয়, এটা মাঝে মাঝে প্রশ্ন ওঠে। আমি বুঝে উঠতে পারি না। যাই হোক, আমরা সম্মান করি। কারণ আমাদের সরকার মুক্ত চিন্তার প্রকাশে বিশ্বাস করে। শুধু বাধা একটিই আছে, সেটা হলো আমাদের স্বাধীনতা, সম্মান, আত্মপরিচয়- এগুলোকে নিয়ে আক্রমণ না করে যা ইচ্ছা করেন।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘কারো ওপর চার্জ করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেই। সংসদে পাশ না হওয়া পর্যন্ত একটি টাকাও কোথাও ব্যয় করতে পারবো না, একটি টাকাও আনতে পারবো না। এটা সবাই জানে। আমাদের আনলিমিটেড পাওয়ার নেই। মিলিটারি শাসকদের মতো এখানে সেতু হবে, এখানে রাস্তা হবে, এ ধরনের লাঠি দিয়ে দেখানোর ক্ষমতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেই। সংসদে বাজেট পাশ হয়, সেই বাজেটের আইটেমগুলোকে এক্সিকিউট করা আমাদের দায়িত্ব। এই যে স্বাধীনতা, আমরা আনন্দবোধ করি। সেটা আরও বাড়ুক আমরা চাই। একটা অনুরোধ, স্বাধীনতা প্রয়োগের সময় যেন আমরা সবাই দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন থাকি।’
একনেক প্রসঙ্গে তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্প যখন একনেকে যায় তখন প্রধানমন্ত্রী প্রথম প্রশ্নটাই করেন, কার উপকার হবে? নারীরা পাবে, শিশুরা পাবে, গ্রামের লোকেরা পাবে, এ ধরনের প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে আমাদেরকে প্রশ্ন পাশ করতে হয়। এরপরও আমাদের অনেক বদনাম আছে। আপনারাই সেগুলো প্রকাশ করেন। আমরা সেগুলো অ্যাপ্রিশিয়েট করি। এতে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আপনাদের দেয়া তথ্য নিয়ে আমরা অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করি। আপনারা আরও বেশি করে করেন। আমরা আহ্বান করি, দুর্নীতি যে জায়গায় চিহ্নিত করছেন- বালিশকাণ্ডেই হোক বা যেকোনো কাণ্ডেই হোক, এতে আমরা কুণ্ঠিত নই।’
নদী বন্দর / এমকে