ছোট্ট খালের উপর স্লুইচ গেট নির্মাণ হলে পাল্টে যেতে পারে শেরপুর গারো পাহাড় এলাকার সীমান্তের ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য। জেলার গারো পাহাড়ে দীর্ঘ দিন থেকে পানি সংকটের কারণে আবাদ ও ফসল থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কালাঘুষা খালের উপর স্লুইচ গেট নির্মাণের পরিকল্পনার খবরে সরব হয়ে ওঠে স্থানীয়রা। কিন্তু সেই স্লুইচ গেট নির্মাণ স্থানীয় একটি চক্র বাধাগ্রস্ত করার প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
প্রকল্প গ্রহণকারী এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মওসুমে যেখানে পানির অভাবে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারে না, তারা সেই পানি পাবে এবং স্বল্প খরচে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে সেচ দিতে পারবে।
এলাকাবাসী ও অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা কেবলমাত্র সেচের কারণে অনাবাদি পড়ে থাকে। ওইসব এলাকার অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া ও খাল বর্ষাকালের পর থেকে শুকিয়ে যায়। ফলে ওইসব এলাকার মানুষ কেবলমাত্র আমন আবাদ ছাড়া অন্য চাষাবাদ করতে পারে না। তাই জাইকার অর্থায়নে সম্প্রতি সরকার ওই এলাকার কাংশা ইউনিয়নের কালাঘুষা খালের উপর ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন’ উপপ্রকল্প গ্রহণ করেছে।
ওই প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রকল্পটি যাতে না বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য নানা কৌশলে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিষয়টি ভুক্তভোগীরা জেনে ওই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।
তারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি এলাকায় কেবলমাত্র আমন আবাদ ছাড়া অন্য ফসল ও সবজি চাষ করতে না পারায় অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। ফলে প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।
ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি বলেন, স্লুইচ গেটটি বাস্তবায়ন হলে কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও, হালচাটি, নওকুঁচি, বাকাকূড়া ও ডেফলাইয়ের অংশসহ ৫ গ্রামের প্রায় ২ হাজার একর জমিতে বরি শস্যসহ বোরো আবাদ সেচের আওতায় আসবে। এ সব গ্রামে সেচসহ খাবার পানিরও সংকট রয়েছে। স্লুইচ গেট চালু হলে স্থানীয় আদিবাসী-বাঙালি অধ্যুষিত মানুষের ভাগ্য বদল হবে।
স্থানীয় কাংশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে কুচক্রী মহল বাধা দিচ্ছে। এখানে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করে, পাথর উত্তোলন করে এবং শীত মওসুমে গরিবদের কাছে পানি বিক্রি করে; তারাই এই কাজগুলো করছে। সাধারণ কৃষকের স্বার্থে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন দরকার।
শেরপুর এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না রেখে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ি অনাবাদি শত শত একর জমি চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। পাহাড়ি পানির গতিবিধি নির্দিষ্ট স্তর নির্ধারণের মাধ্যমে স্লুইচ গেট করা হবে। এতে প্রয়োজনের বেশি পানি উপর দিয়ে চলে যাবে আর প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষিত থাকবে কৃষি সেচের জন্য।’
নদী বন্দর/এসএইচ