হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিলস। চারদিকে পাহাড়। পাহাড়ের এই উচু নিচু ঢালু স্থানে লেবু, কলা, নাগা মরিচ, পেঁপেসহ নানা ধরনের ফল ও সবজির চাষ হচ্ছে। আর এই সবজি ও সফল মিশ্র উপায়ে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন শ্রীমঙ্গল শহরের বাসিন্দা হাজী মো. মখন মিয়া। একই সঙ্গে তার এই উদ্যেগের কারণে কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক শ্রমিকের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফয়জাবাদ হিলসে মাখন মিয়ার চাষকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ৮০ একর। এরমধ্যে একটি বাগান প্রায় ৫০ একর। অন্যটি একই পাহাড়ের ১ কিলোমিটার দূরে ৩০ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন তিনি।
১৯৭৫ সালে মাখন মিয়া ফয়জাবাদ হিলসের পতিত জমি কিনে বাগান শুরু করেন। এরপর ১৯৯২ সালে আরেকটি বাগান গড়ে তোলেন তিনি। তার এই দুইটি বাগানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার লেবু গাছ, ১০ থেকে ১২ হাজার কলা গাছ, দেড় হাজার পেঁপে গাছ রয়েছে। এছাড়াও এই জমিতে রয়েছে কাঁঠাল, নারিকেল, সজিনা, আনারস ও বাঁশ গাছও।
মাখন মিয়ার কলা বাগান
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সবজি ও ফল চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে গোবর। শুকনো মৌসুমে পাম্পের মাধ্যমে ফল ও সবজি গাছের গোড়ায় পানি সরবরাহ করা হয়। এতে সতেজ থাকে গাছগুলো। পরে সেই গাছই ফলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এই ফল ও সবজি বিক্রি করে হওয়া দিয়েই চলেন মাখন মিয়া।
বর্তমানে মাখন মিয়ার সবজি ও ফল বাগান পরিচর্যার জন্য দৈনিক শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। গাছ থেকে ফল ও সবজি সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব ফল ও সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ হচ্ছে। বাগান মালিক নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেককেই এই বাগানে কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিষমুক্ত ফল ও সবজি বাজারে বিক্রি করে পাইকাররাও লাভবান হচ্ছেন।
প্রচুর পরিমান পেপে চাষ হয় মাখন মিয়ার জমিতে
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মখন মিয়ার দুটি বাগান রয়েছে। ওই বাগান দুটিতে ১২ মাস ফসল উৎপাদন হচ্ছে। পাহাড়ি জমিতে কঠোর শ্রমের মাধ্যমে মিশ্র ফসল চাষ করে মখন মিয়া সফল হয়েছেন।
বাগানের ম্যানেজার তোবার আলী মোল্লা বলেন, ‘ফয়জাবাদ হিলসে অবস্থিত এ দুইটি বাগানে লেবু, কাঁঠাল, বেলেম্বু, নারিকেল, পেঁপে, কলা, আনারসসহ নানান ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে। এখানের পরিবেশ ফসল চাষের উপযোগী। বাগান মালিক মখন মিয়ার নির্দেশনায় দেখভাল করে যাচ্ছি। কিন্তু বাগান দুটির উৎপাদন দেখে একটি চক্র গভীরভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাগানের ক্ষতি সাধন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
বিলম্বি ফল
বাগান মালিক মখন মিয়া বলেন, ‘বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পেরে আনন্দিত। বাগানে ১২ মাস মিশ্র ফসল চাষ হচ্ছে। শ্রমিকরা বাগানে পরিচর্যার কাজ করছেস। তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে পারিশ্রমিক প্রদান করি। এক সঙ্গে পারিশ্রমিক পেয়ে শ্রমিকরা উপকৃত হচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল যাচ্ছে দেশের নানা স্থানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ি জমিতে ফসল চাষে প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হচ্ছে। আমার ছেলে লন্ডনে ছিল। সে দেশে এসে বাগানের দেখভালে সময় দিচ্ছে। ছেলের সহযোগীতা পেয়ে সবজি ও ফল চাষে আরো উৎসাহিত হয়েছি।’
নদী বন্দর/এসএম