নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে জমি বর্গা নিয়ে আগাম তরমুজ চাষ করেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি লাভও করছিলেন তারা। কিন্তু এ বছর গাছ হৃষ্টপুষ্ট হলেও ফলন ভালো হচ্ছে না। ফলে লোকসানের আশঙ্কা ভর করছে কৃষকদের ওপর।
কোম্পানীগঞ্জের পাশের উপজেলা সুবর্নচরের চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জয়নাল আবেদীন। তিনি মুছাপুরে ২৫ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তরমুজ চাষাবাদে যুক্ত থাকলেও আগাম তরমুজে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় হতাশ তিনি।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে তরমুজ আবাদ করছি। কখনো এতো লোকসানে পড়িনি। আমার গাছগুলো খুব হৃষ্টপুষ্ট। কিন্তু ফলন নেই। কেন এবার আশানুরূপ ফলন হচ্ছে না জানা নেই। তবে আল্লাহ যদি সহায় হন তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলন ভালো হলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্রগ্রাম, ফেনীসহ বেশ কিছু জেলায় আমার তরমুজ যায়। ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। একর প্রতি খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।’
রফিক উল্যাহ নামে অপর কৃষক বলেন, ‘আমাদের তরমুজের অবস্থা ভালো না। আবহাওয়া খারাপ নাকি ওষুধ খারাপ আমরা বুঝি না। জমিতে সব ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গাছ হৃষ্টপুষ্ট, কিন্তু ফলন নেই। আমাদের মুখের ভাষাও নাই।’
১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন সিরাজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আশানুরূপ ফলন হয়নি। হয়তো চালান উঠে সামান্য লাভ হবে।’
মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘জেলার অন্যান্য উপজেলার মানুষ মুছাপুরে তরমুজ আবাদ করেন। আগামীতেও আবাদ করবেন বলে আমি আশাবাদী। লাভ লোকসান মিলেই ব্যবসা। যদি কোনো কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েন তাহলে অনুরোধ করবো কৃষি অফিস যেনো তাদের পাশে থাকে। আমিও চেয়ারম্যান হিসেবে পাশে থাকবো।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে তরমুজ চাষে ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। এবছর কোম্পানীগঞ্জে ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯০০ হেক্টর। তরমুজ চাষে কেউ কেউ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমি মনে করি আগাম তরমুজ চাষে ঝুঁকি ও লাভের সম্ভাবনা দুইটাই থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবর্ণচরের এক কৃষকের মাধ্যমে কোম্পানীগঞ্জে তরমুজ আবাদ শুরু হয়। ফলে দিন দিন আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। তারা কখনো কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। নিয়মিত চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সামনে রমজান , তাই তরমুজে লোকসান হবে না বলে মনে করি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এ বছর নোয়াখালী জেলার প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। আগাম তরমুজ এখন বাজারজাতকরণের অপেক্ষায়। আমি নিজেই তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখেছি। কৃষকদের অনুরোধ করবো তারা যেনো আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখেন। যে কোনো সমস্যায় কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে রয়েছে।’
নদী বন্দর/এসএইচ