গাইবান্ধায় যমুনা নদীর পশ্চিম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলায় আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের মানুষজন। প্রকল্প এলাকার ১০ কিলোমিটারের অধিকাংশ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লকের কাজ বন্ধ রয়েছে। আবার যেসব পয়েন্টে কাজ চলছে তাও খুব ধীরগতিতে।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে সিডিউল অনুযায়ী কাজ চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ না হলে আসন্ন বন্যায় ফসল, আবাদি জমির পাশাপাশি ঘরবাড়ী, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো বিলীনসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের জন্য গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারি থেকে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি ও হলদিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের ১০ কিলোমিটার অংশে ৩৮টি প্যাকেজে ৩৮টি পয়েন্টে ৭’শ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এসব পয়েন্টে পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শুরুর প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও কিছু পয়েন্টে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া তেমন কোন অগ্রগতি করতে পারেননি ঠিকাদাররা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অধিকাংশ পয়েন্টে শুধু জিও ব্যাগ ফেলে ও খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। যেসব জিওব্যাগ এখনি নদীতে ধ্বসে পড়ছে। আর যে কয়টি পয়েন্টে ব্লকের কাজ চলছে তাও অত্যান্ত ধীরগতিতে ও নিম্নমানের। স্থানীয় বালি ও নিম্নমানের পাথর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব ব্লক।
বিশেষ করে হলদিয়া ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার অংশের অবস্থা বেশী নাজুক। সেই সাথে বাঁধের নিচ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন বাঁধটি। কবে নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কানাইপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের কিছু বিল করার জন্য দেখানো কাজ করছেন। বেশিরভাগ সময় কাজ বন্ধ থাকছে। নিম্নমানের কাজের কারণে বন্যায় আবারো ভাঙনের আশষ্কা রয়েছে।
আজিম উদ্দিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, এভাবে ধীরগতিতে কাজ চলছে। বন্যার আগে কাজ শেষ করতে না পারলে এ প্রকল্প আমাদের কোন কাজেই আসবে না।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, আসন্ন বর্ষায় নদী ভাঙন ও আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানান।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা সবচেয়ে বেশী নদী ভাঙন কবলিত। তাই এই দুই উপজেলার ১০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সবগুলো পয়েন্টেই কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, কাজের গুণগত মানের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেন্ট্রাল ট্রাস্কর্ফোস কমিটি দেখভাল করছেন। কাজের গতি বাড়াতে সার্বক্ষণিক ঠিকাদারদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসআরকে