ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বিভিন্ন হাটে-বাজারে তিন-চার দিন আগেও যে পেঁয়াজ মণ প্রতি তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন মণ প্রতি দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম না কমলে আমদানি করা হবে- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
শনিবার (২০ মে) জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কম দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে দেশি পেঁয়াজের। দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ফরিদপুরের পেঁয়াজের হাট-বাজারগুলোতে কয়েক দফায় বেড়ে যায় দাম। দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ আবার দাম কমতে শুরু করেছে। তবে আমদানির আগেই হঠাৎ এমন দরপতনে চিন্তায় চাষিরা।
এভাবে দাম কমতে থাকলে লোকসানের আশঙ্কাও তাদের। যদিও পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি ভোক্তারা। তবে প্রতিমণ পেঁয়াজ গড়ে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা দরে অর্থাৎ বর্তমান বাজারমূল্য বজায় থাকলে সবার জন্যই ভালো- এমন দাবি চাষি, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। হাটে পাইকারি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। এ হাটে প্রতিমণ পেঁয়াজ দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত তিনদিনের তুলনায় মণে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কম।
কৃষক সলেমান কাজী জানান, দীর্ঘদিন পর ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। আমদানি বন্ধসহ বাজারদর ঠিক থাকলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়বে। এবার প্রায় ১৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন তিনি। দাম বাড়ায় ৪০ মণ বিক্রি করেছেন। এ রকম দাম থাকলে চাষিদের জন্য ভালো, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হয় বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে সালথার পেঁয়াজ চাষি রুস্তম আলী বলেন, গত দুই-তিন দিনে ভাল দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলিয়ে দেড়শ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আজ হাটে ৩০ মণ বিক্রির জন্য এনেছি। কিন্ত দাম মণ প্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনও যে দাম আছে তা মোটামুটি ভালো। আরও দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সাতৈর বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ বিক্রি করতে। তিনি বলেন, দাম বেশি দেখে পাঁচ মণ পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। গত হাটে যে পেঁয়াজ তিন হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই পেঁয়াজ আজ দুই হাজার ৩০০ টাকা দাম বলছে। কী করবো ভাবছি। যেহেতু গাড়ি ভাড়া করে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি, তাই বিক্রি তো করতেই হবে।
মধুখালী উপজেলা সদর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তের মালিক মো. আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হঠাৎ করে কয়েকগুণ দাম বৃদ্ধির পর আবার হঠাৎ দরপতন হয়েছে। মোকামে চাহিদা কম। আমদানির খবর শুনেই মূলত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতিমণে হাজার টাকা কমেছে।
শনিবার ভালো মানের পেঁয়াজ দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে কিনেছি। তবে আমার ধারণা আমদানির কথা শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই বাজারের এই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, দুই হাজার ১০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০০ টাকা মণ প্রতি পেঁয়াজের দাম থাকলে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষকের জন্য সুবিধা। তাছাড়া দেশের কৃষকদের ঘরে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। ফলে এখন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা ভালো।
এ বিষয়ে বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যাবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে দাম একটু কমবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী, অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যারা লাভবান হতে চান তাদের বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল।
তবে চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। দামের বিষয়ে আমাদের তো কোনো হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহোযোগিতা করে থাকি।
নদী বন্দর/এসএস