তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, লবিস্ট নিয়োগ করে বিবৃতি আনা দেশবিরোধী অপতৎপরতা ও দেশদ্রোহিতার শামিল। বিএনপি সেই কাজটিই করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ‘সমষ্টি’ আয়োজিত ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ে সেরা রিপোর্ট পুরস্কার প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আমাদের দেশ থেকে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ সদস্যরাও সেখানে যায় এবং শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে আমরা এখন শীর্ষে রয়েছি। এটি নিয়েও একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সে কারণে গত কয়েক দিনে কিছু পেশাদার বিবৃতিদানকারী সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দিয়েছিল এবং ২০১৩-১৪-১৫ সালে দেশে যখন মানুষ পোড়ানোর মহৌৎসব চলছিল, সেটার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়নি। ইসরাইলি বাহিনী যখন ফিলিস্তিনের শিশুদের ঢিল ছোড়ার প্রত্যুত্তরে ব্রাশফায়ার করে পাখি শিকার করার মতো মানুষ শিকার করে, সেটির বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়নি। কিন্তু সেই তারা আমাদের শান্তিরক্ষী মিশন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এটির সাথে একটি গভীর ষড়যন্ত্র যুক্ত।
‘একদিকে দেশের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র আর অন্য দিকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করছেন’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যখন আমাদের দেশ সফর করছেন তাদের সফরকে উপলক্ষ করেই এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইস ওয়াচ এই বিবৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথেরিন পোলার্ড শনিবার আমাদের স্পিকারের সাথে দেখা করেছেন এবং শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সদস্যদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যারা শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করছেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনটি হবে দেশে ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা কোনও সরকার আসবে না কি, কোনও তাঁবেদারি সরকার বসিয়ে বিশ্ববেনিয়ারা তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য অপচেষ্টা চালাবে, না কি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গণতন্ত্র আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে, সেটির ফয়সালা। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনটি হবে দেশের ভূমি রক্ষার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। সে জন্য সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা চাই।
এর আগে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সাংবাদিকতা পুরস্কার আয়োজনের জন্য গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ‘সমষ্টি’কে ধন্যবাদ ও পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিসংখ্যানে ২০১৬ সালের চিত্র বলছে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১০ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশের বয়স ১ থেকে ৪ বছর।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য এবং আমাদের নদীমাতৃক দেশে সাঁতার জানাটা আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছি, আশা করি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারবো।
বক্তৃতা শেষে তথ্যমন্ত্রী ১৩ পুরস্কার বিজয়ী- দ্য বিজনেস পোস্টের আরেফিন আপ্পি, চ্যানেল ২৪ এর জিনিয়া কবির সূচনা, দৈনিক প্রথম আলোর পার্থ শঙ্কর সাহা, জাগোনিউজের মাসুদ রানা, সময় ট্রিবিউনের সোহাগী আকতার, দৈনিক ভোরের কাগজের ঝর্ণা মনি, মাছরাঙা টিভি’র কাউসার সোহেলী, দৈনিক ডেইলি স্টারের নীলিমা জাহান, দৈনিক জনকণ্ঠের স্বপ্না চক্রবর্তী, দৈনিক সমকালের জাহিদুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের সজীব আহমেদ, দ্য বিজনেস পোস্টের আসিফ ইসলাম শাওন এবং চ্যানেল আই অনলাইনের আরেফীন তানজীবের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও ‘সমষ্টি’ পরিচালক মীর মাসরুর জামানের সঞ্চালনায় ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক-বার্তা জাহিদুল ইসলাম, গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার সারওয়ার-ই-আলম প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
নদী বন্দর/এসএস