মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন কবলিত লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ৭ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। ঈদুল আজহার কোরবানির পশু কেনা-বেচা নিয়ে ভাঙন কবলিত পরিবারে নেই কোনো উৎসব কিংবা তোড়জোড়। তাদের ভাবনাজুড়ে শুধুই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তা। কারণ করালগ্রাসী মেঘনা তাড়া করছে তাদের; গিলে খাচ্ছে শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে মেঘনা তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ, কাদির পণ্ডিতের হাট, লুধুয়া ফলকন, পাটারীর হাট এবং রামগতি উপজেলার সুজন গ্রাম, জনতা বাজার ও মুন্সীরহাট গ্রামে নদী ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলছে। ফলে উল্লিখিত গ্রামের বাসিন্দাদের ঈদ নিয়ে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন বাড়ি ভেঙে ঘর-দরজা, আসবাবপত্র ও গাছপালা অন্যত্র সরানোর কাজে। অনেকে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এক টুকরো জমির সন্ধানে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মেঘনার ভাঙনে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০-১৫টি পরিবার বসতভিটা হারাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ অন্য এলাকায় গিয়ে জমি কিনে কোনো রকমে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। অধিকাংশেরই ঠিকানা হচ্ছে সরকারি বেড়িবাঁধের ওপর। আয়-রোজগারের মাধ্যম হারিয়ে সেখানে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
কমলনগরের পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু জানান, ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া এসব মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। কারণ, প্রত্যেকেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চিন্তিত।
কথা হয় রামগতি উপজেলার সুজনগ্রাম এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে। বসতভিটা অন্যত্র সরিয়ে নিতে খুবই ব্যস্ত তিনি। কোন এলাকায় যাবেন? প্রশ্ন করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাপ-দাদার ভিটা হারায়ে এহন নিঃস্ব হয়ে গেছি। এহন পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উডুম।’
এমন অবস্থায় ঈদ উপলক্ষে কোরবানির পশু কিংবা অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটা করেছেন কিনা এ প্রশ্ন অবান্তর। এক সময় নিজেই বললেন, ‘সব হারিয়ে এহন খাইতে পাই না, আবার কোরবানির কেনাকাটা।’
রামগতি উপজেলার চরআলগি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, গত তিন মাসে তার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতভিটা মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত মেঘনার ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভাঙন কবলিত ওই ৭ গ্রামের দুস্থ পরিবারগুলোর মাঝে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙনের তীব্রতা ঠেকাতে আপদকালীন বরাদ্দের আওতায় তিনটি স্পটে জিও টিউব ব্যাগে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। আরও ছয়টি এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেখানেও বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, ভাঙন কবলিত হতদরিদ্র মানুষের ঈদের আনদ উদযাপনে সরকারি তালিকা করে ঈদের বিশেষ ভিজিএফ-এর চাল বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাঙনরোধে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি স্পটে চলমান রয়েছে। আশা করছি বাঁধ নির্মিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
নদী বন্দর/এসএস