শখের বসে ড্রাগন চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার মংমং সিং মারমা। ২০২০ সালে শতাধিক ড্রাগনের চারা দিয়ে আবাদ শুরু করলেও এখন ৫ একর জমিতে আছে ১৬শ’র বেশি গাছ। চলতি মৌসুমে লাখ টাকা আয়ের পাশাপাশি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। জেলার পাহাড়ি আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ার কারণে যে কোনো ফল চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পেরে অধিকাংশ জুম চাষি এখন বিভিন্ন ফলদ বাগানে ঝুঁকছেন।
রোয়াংছড়ির জামছড়ি এলাকার মংমং সিং একজন উন্নয়নকর্মী। পাশাপাশি শখের বশে ২০২০ সালে কয়েকশ ড্রাগন গাছ লাগিয়েছিলেন। পরে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিন বছরে পাঁচ একর ঢালু পাহাড়ে ১৬শ ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। এর মধ্যে লাল, হলুদ, সাদাসহ ৭ জাতের ড্রাগন ফল রয়েছে। পাশাপাশি আম, কমলা, পেয়ারা চাষ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এরই মধ্যে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার পাশাপাশি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন স্থানীয়দের কাছে।
মংমং সিংয়ের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আট জনের একটি দল ড্রাগন ফল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কাঁধে ড্রাগন ফল ভর্তি থুরুং নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ফলগুলো বাজারজাত করার জন্য প্যাকিং করছেন। তার বাগানে ৫ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। এলাকায় ড্রাগন ফলের বাগান হওয়ায় অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অনাবৃষ্টির কারণে প্রথমে ফুল নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়েছে বলে জানান মংমং সিং।
তিনি জানান, পৃথিবীতে প্রায় ২শ প্রজাতির ড্রাগন আছে। তার বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, সবুজসহ ৭ প্রজাতির ভিয়েতনামি ও ব্রাজিল জাতের ড্রাগন ফল আছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আম, মাল্টা, বিদেশি ফলের মধ্যে রাম্বুটান, লংগান, কাশ্মীরি আপেল, বারি-৪, কাটিমন, সুবর্ণ রেখাসহ ৩৫ প্রকার বিভিন্ন ফলের সমাহার তার বাগানে। বছরের মে-অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে দুবার ফল তুলতে পারেন। প্রতি চালানে প্রায় ২ টন ড্রাগন সংগ্রহ করেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ৯ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
জানা যায়, জেলার জামছড়িতে ৫ একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬শ কংক্রিট পিলারে ১৬শ ড্রাগন গাছের বাগান করেন তিনি। রোপণের ১৪ মাস পরই ফল আসতে শুরু করে। এ বছর ভালো ফলন হওয়ায় ৯ মেট্রিক টন ফল বিক্রি করতে পারবেন। গত বছর ৬ মেট্রিক টন ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এ বছর ১৩ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন। তার বাগান থেকে ড্রাগনের কাটিং বিক্রি করে বাড়তি আয়ের পথও সুগম হয়েছে।
মংমং সিং বলেন, ‘বর্তমানে ১৩৫০টি পিলারে ৬০০০ গাছ আছে। ২০২১ সাল থেকে ফল পেতে শুরু করি। ২০২৩ সালে ৩ দিনে ৩ টনের মতো ফল তুলতে পেরেছি। বর্তমানে বাগান থেকেই পাইকারি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বাগানে বেশি লাভ না হলেও ক্ষতি নেই। সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।’
পাইকারি ব্যবসায়ী উত্তম দাশ জানান, তিনি বাগান থেকে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে সংগ্রহ করেন। সেগুলো দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করেন। খুচরা প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি করেন। তবে ফল সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার সময় পার্বত্য জেলা পরিষদকে দুবার টোল দিতে হয়। এছাড়া রাস্তায় বিভিন্ন গ্রুপকেও চাঁদা দিতে হয়। ফলে চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পায় না বলে জানান তিনি।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বান্দরবান কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের প্রয়োজনীয় সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ২০২১-২২ সালে জেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছিল। এ বছর ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ড্রাগন ফলের চাহিদা রয়েছে। সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।’
নদী বন্দর/এসএইচবি