তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নিম্নাঞ্চল ও লোকালয় থেকে এখনো সরেনি পানি। ফলে বন্যার্তদের ভোগান্তি চরমে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ১০ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি আছেন। তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। পাশাপাশি গো-খাদ্যেরও চরম সংকট আছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) ভোর ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। নদীর পানি নামতে শুরু করলেও এখনো বিপৎসীমার ওপরে।
ঘরবাড়িতে পানি ঢোকায় দুদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। এসব অঞ্চলের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে বন্যার্তদের মধ্যে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল নিজ উদ্যোগে ৩০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন, কুটি মারি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন ও মহিলার সংরক্ষিত আসনের সদস্য শেফালী বেগম।
গড্ডিমারি ইউনিয়নের পানিবন্দি হাজেরা খাতুন বলেন, তিস্তার পানি ঘরে উঠে খুব কষ্টের মধ্যে পড়েছি। রান্নাবান্নার করতে পারিনি। শুকনো খাবার খেয়ে আছি। পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল। ঘরে খাবার পানিও নেই। দুদিন ধরে খুব কষ্টে আছি। সরকারিভাবে এখনো কিছু পাইনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছের হুমায়ুন বলেন, নদীর পানি ঘরবাড়িতে ঢোকায় ভয়াবহতা বেড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সবকিছুই তলিয়ে গেছে।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এর আগে গত শুক্রবার দহগ্রাম এলাকার গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে যায়।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দহগ্রামের তিস্তার তীরে যদি বেড়িবাঁধ হলে পানির ঢুকতো না। আমরা নিরাপদে থাকতাম। দহগ্রামের তিস্তাপাড়ে অপরিকল্পিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজ করছে তা ভেস্তে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, গড্ডিমারি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত এলাকা তিস্তার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গড্ডিমারির এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চরের মানুষ প্রায় তিন দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছে। পানিবন্দিদের জন্য মুড়ি ও গুড় বিতরণ করা হয়।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, বন্যার্ত পরিবারগুলোর সব সময় খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে হাতীবান্ধা উপজেলার জন্য ২০ টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে দ্রুত বিতরণ হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, বন্যার্ত পরিবারদের মধ্যে ৪৫০ টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যার্তদের মধ্যে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ চলছে। বন্যার্তদের খোঁজ নিয়ে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএইচবি