সুনামগঞ্জে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে শুরু হয়েছে দখল হওয়া ৫ টি খাল পুনরুদ্ধার অভিযান। শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কামারখালের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
এ সময় পৌরসভার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজনসহ প্রশাসনের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এই খালগুলো উদ্ধার সুনামগঞ্জের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তারপরও খালগুলো দখলমুক্ত করতে কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার দায়ের করা রিটের শুনানিতে খাল উদ্ধারের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
সুনামগঞ্জ পৌরসভায় বৃষ্টির পানি শহর থেকে নামার গুরুত্বপূর্ণ সাতখালের পাঁচটিরই কোনো অস্তিত্ব নেই। অবৈধ দখলদার কবলে ছিল এসব খাল। খালের উপর ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এক সময়ের বড় বড় খাল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীরা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন।
মধ্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ খামারখাল ৮৪ জন প্রভাবশালীর দখলের বিষয়টি চিহ্নিত হলেও খাল উদ্ধারে অগ্রগতি ছিলনা। এ কারণে পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত ছোট ছোট ড্রেন এখন আর কোনো কাজে আসছে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ড্রেন ও নর্দমার পানি ঘরে ঢুকছে। অস্বাস্থ্যকর ও অসহনীয় পরিবেশে বিপন্ন পৌরবাসী।
এখন বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জ পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা থাকা কঠিন হয়ে যায়। সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রায় দুই লাখ মানুষকে এমন বিপজ্জনক অবস্থা থেকে বাঁচাতে ইতোপূর্বে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে মামলা করে।
আদালত সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পৌর শহর ও আশপাশের এলাকার পাঁচটি খালের দখলদারদের পূর্ণ তালিকা করে তাদের উচ্ছেদের আদেশ দেন। একই সঙ্গে খালগুলোর সীমানা নির্ধারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ বাস্তবায়নে আজ থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় সুনামগঞ্জের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা বিন্দু বলেন, খালগুলোতে স্থাপনা নির্মাণ করায় শহরের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারণে বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন জায়গা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এই খালগুলো উদ্ধার জরুরি ছিল। অবশেষে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। পর্যায়ক্রমে সকল খাল দখল মুক্ত করা প্রয়োজন।
দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই আমার ঘরে পানি ঢুকে। বৃষ্টি হলে ঘুম থেকে উঠেই পানির সাথে যুদ্ধ করতে হয়। আমরা শহরবাসী বিরক্ত জলাবদ্ধতার জন্য। এই খাল উচ্ছেদ আমাদের মনে শান্তিতে বসবাসের আশা জাগাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খালগুলো উদ্ধার জরুরি ছিল। এটি সুনামগঞ্জের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আজ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হলো। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি