কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশের আচরণ ভীতিকর। কে কোন দল, আদর্শে বিশ্বাস করে এটা দেখা পুলিশের কাজ নয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, মানুষ যেন মনে না করে এটা পুলিশী রাষ্ট্র- এমন মন্তব্য করেছেন দেশের উচ্চ আদালত। বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মামলার শুনানিতে এক ঘণ্টা আদালতে দাঁড়িয়ে থাকেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার।
২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে ইয়াবা কারবারি বলে ফাঁসানোর চেষ্টা করে মোহাম্মদপুর থানার এক এসআই। প্রতিবাদ করলে থানায় নিয়ে করা হয় নির্যাতন। এছাড়া গেল বছরের ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় রায়হান আহমদকে।
শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়- পুলিশের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের এমন নজির রয়েছে আরো অনেক। যার সবশেষ শিকার এক বিচারক। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বপালনকালে বিচারকের সঙ্গে এসপি তানভীর অশোভন এবং ঔদ্ধ্যতমূলক আচরণ করেন। বিচারকের সঙ্গে পুলিশের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হন দেশের বিচারকরা। বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে ডেকে পাঠানো হয় পুলিশ সুপারকে।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চান এসপি। তিনি বলেন, বিচারককে চিনতে না পারায় অনাকাঙ্ক্ষিত এ ভুল। একঘণ্টা শুনানির পুরোটা সময় আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন এসপি। এ মামলার শুনানিকে ঘিরে আদালতের বাইরে অপেক্ষমান ছিলেন আইনজীবী, পুলিশসহ উৎসুক জনতা।
এদিন শুনানিতে পুলিশকে সতর্ক করে উচ্চ আদালত বলেন, পুলিশের আচরণ এখনো ভীতিকর, যা কাম্য নয়। রাষ্ট্র যাতে পুলিশী রাষ্ট্র না হয় সে বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন উচ্চ আদালত।
আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, পুলিশকে হতে হবে জনগণের বন্ধু। কিন্তু উনারা যদি তাদের আচরণ দিয়ে পুরো এলাকায় আতংক সৃষ্টি করেন, সেটা কোনভাবে কাম্য নয়। এক সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।
শুনানি শেষে বিচারকের সঙ্গে এসপির দুর্ব্যবহার দেখে ফেলা সরকারি কর্মকর্তা শাজাহান আলী ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এসপিকে।
ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, উনি (এসপি) কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। একইসঙ্গে আদালতে কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
বিচারককে চিনতে না পারায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে পুলিশ সুপার দাবি করলেও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হয়ে কোনো নাগরিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশ্লেষকরা।
নদী বন্দর / এমকে