জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ছোট বোন শেখ রেহানা তার সঙ্গে ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের নিহত সকল সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পবিত্র ফাতেহা পাঠ, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
দোয়া ও মোনাজাত শেষে সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে আকাশপথে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ কার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
এর আগে আজ সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে আকাশপথে হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন সরকারপ্রধান। পরে সেখান থেকে তিনি নিজ গাড়িতে করে সমাধিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সমাধি কমপ্লেক্স চত্বরে পৌঁছান। সেখানে অবস্থানরত স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন।
তারও আগে সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফুল দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল সশস্ত্র সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এরপর সেখানে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ছোট বোন শেখ রেহানা এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ধানমণ্ডি থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যান বনানী কবরস্থানে। সকাল সাড়ে ৭টায় সেখানে জাতির পিতার পরিবার সদস্য ও অন্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পাশপাশি ফুল ছিটিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ করেন ও বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের গুলিতে সপরিবারে মারা যান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। সেই রাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ছাড়াও তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে হত্যা করে।
নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় দুজনই সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় দাফন করা হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নদী বন্দর/এসএইচবি