পরিবর্তন যদি আনতে হয় তরুণরা ছাড়া সম্ভব নয় এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে লড়াই, সংগ্রাম , যুদ্ধ সবই করতে হবে তরুণদের।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নাগরিক সাংবিধানিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা শীর্ষক’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ (নুরপন্থি)।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার কষ্ট হয়, যখন কোনো নারী শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয় তখন তার ক্যাম্পাস, সহকর্মী তরুণরা কোনো আন্দোলন করে না। আমরা কিন্তু পাকিস্তান আমলে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু এখনকার তরুণদের মধ্যে তা দেখি না।
তিনি বলেন, এক তরুণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বড় হয়ে কি হতে চাও? তখন সে বলে রাজনীতিবিদ হতে চাই। কেন? এখানে অনেক টাকা! সত্যিই তাই বলে এখনকার সময়। কি পর্যায়ে গেছে তরুণদের ভাবনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোন সংবিধানের কথা বলে আওয়ামী লীগ, এটা তো আওয়ামী লীগের তৈরি করা সংবিধান, যে সংবিধানে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আওয়ামী লীগের একটি সমস্যা, তারা মনে করে এ দেশের মালিক আওয়ামী লীগই। এর ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে হলে বড় একটা ঝাঁকুনি দরকার, সংগ্রাম, যুদ্ধ দরকার। বড় সুনামি ছাড়া আমাদের ঘাড়ে যে পাথর চেপে বসে আছে তা সরানো যাবে না।
আওয়ামী লীগ নেতাদের স্মরণ করিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৭৩ দিন হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে, ১১ জনকে গান পাউডার দিয়ে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। তাদের কি একবার মনে পড়ে না। শিষ্টাচার বলতে আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন কোনো জিনিস নেই, তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সন্ত্রাসীদের মতো। তারা আমাদের একক ভাবে গালি দেয়।
ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের তো পুরোটাই মিথ্যার ওপর, সব কিছু আওয়ামী লীগের মিথ্যার ওপর তৈরি করা। তাদের মন্ত্রীরা যা নির্দেশ দেয় তাই প্রকাশ করা হয়, এখানে এত উৎপাদন হয়েছে, দেখি সেটাই দেখানো হয়।
কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই তো, কোনটি বাবি আছে এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, দেখা যায় একজন শিক্ষামন্ত্রীর নামে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠে, ব্যাংক থেকে বিশেষ বিবেচনায় ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এটা কোন দেশ। এই দেশে যদি আমরা পরিবর্তন না আনতে পারি, তাহলে এদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আজকে দেশে যা কিছু দূষিত হয়েছে তার মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগ। মূলত স্বাধীনতার পর থেকেই এ আওয়ামী লীগই দেশের রাজনীতিকে দূষিত করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভাওতাবাজি করে বই লিখে প্রমাণ করতে চায় তারা জনগণের বন্ধু। আসলে তারা ‘প্রভুর’ মতো ভূমিকা রাখছেন।
আলাল বলেন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, এ যেন মন্ত্রীসভা নয়, কচিকাঁচার মেলা। আজকে মমিন, হাছান মাহমুদ এবং আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণ হয় এটি মন্ত্রী পরিষদ নয়, কচিকাঁচার মেলা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য আজ ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বানানো হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ভুয়া জন্ম সনদ দিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভোটার বানানো হয়েছে।
যুবদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, আজকে তোফায়েল আহমেদের মত লোক অপদস্ত হন। মোজাফফর হোসেন পল্টু, ড. কামাল এবং আ স ম রবের মত লোকেরা আওয়ামী লীগ করতে পারেন নাই। কোনো ভদ্রলোক এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা এ দল করতে পারে নাই। সব হাইব্রিড। এই হাইব্রিডরা বড় বড় জায়গা দখল করে আছে।
আলাল বলেন, আজকে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আজকে সময় টিভি এবং ৭১ টেলিভিশনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কেউ কেউ বিএনপির সমালোচনা করছেন। যখন দিগন্ত টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি, আমার দেশ, দিনকাল বন্ধ করে দেওয়া হলো তখন কোথায় ছিলেন আপনারা।
তিনি আরও বলেন, এই শাসকগোষ্ঠীকে কিছুদিন হলেও তাদের ক্ষমতা থেকে বাইরে রাখতে হবে। তাহলে তারা বুঝবে তারা দেশের কী ক্ষতি করেছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।
নদী বন্দর/এসএইচবি