উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। এটি সরকারি হিসাব হলেও স্থানীয়রা বলছেন পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা এর দ্বিগুণ। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা।
এদিকে ভাঙনের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেও অনেক স্থানের ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় ৩২ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। স্থাপনা আছে এমন এলাকায় ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিলেও বরাদ্দ কম থাকায় প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ভিটেমাটি রক্ষায় কোনো কাজ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি ৮৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি স্থিতিশীল থাকার সম্ভবনা আছে। বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে পানি বেড়েই চলেছে। ফলে রাস্তাঘাট ও আমনক্ষেত তলিয়ে গেছে। আর দু’একদিন পানি থাকলে আমার প্রায় ২ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে।
শাখাতি গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, নদীর পানি বাড়লেও ভাঙন ধরে, কমলেও ভাঙন ধরে। আমরা চরবাসী নদীভাঙনের কারণে বছর বছর নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। গত এক সপ্তাহে আমাদের গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। আমরা ঘরবাড়ি সরাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে এই নিয়ে তিনবার নদী ভাঙনের মুখে পড়লাম।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা ভিত্তিক চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সেসব বিতরণের কাজ চলমান এবং শিশুখাদ্য বাবদ ২ লাখ টাকা ও গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা মজুত আছে। নতুন করে বরাদ্দের চাহিদা এখন পর্যন্ত প্রয়োজন হয়নি।
নদী বন্দর/এসএইচবি