আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের কথা আমরা ভুলিনি। সেই অস্বাভাবিক সরকারকে বাংলার মাটিতে আমরা আর মাথাচাড়া দিতে দেব না। ভোট চুরি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সেই খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য বিদেশি মুরব্বিদেরকে ডাকছে বিএনপি। সে কারণে তারা আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে সেটিকে আবার জীবিত করতে চেষ্টা করছে বিএনপি। কোথায় গেল তাদের আন্দোলন এবং ১০ ডিসেম্বরের দিবাস্বপ্ন? সেই আন্দোলনের কী হলো? তাদের আন্দোলন গোলাপবাগের গরুর হাটের পচা গর্তে পড়ে গেল। এখন আর পদযাত্রায় কাজ হয় না। তাই তারা কালো পতাকা নিয়ে শোকযাত্রা করে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের যুগে প্রবেশ করেছে। এটাও শেখ হাসিনার অবদান। আজকে সারা বাংলায় শতভাগ বিদ্যৎ শেখ হাসিনার সরকারই দিয়েছে। এ দেশ ছিল অন্ধকার, কথায় কথায় লোডশেডিং… সেখানে এখন সারাদেশ আলোয় জ্বলজ্বল করছে। গ্রাম হয়েছে শহর- এই অন্তর জ্বালায় তারা (বিএনপি) মরে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু কি বিশ্বব্যাংক নির্মাণ করেছে? বিশ্বব্যাংক তো চোরের অপবাদ দিয়ে সরে গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশের টাকায় এ সেতু করে প্রমাণ করে দিয়েছেন উই ক্যান, আমরা বীরের জাতি। পদ্মাসেতুতে উঠলে নাকি ভেঙে যাবে! পদ্মাসেতু নাকি জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ করা। অন্তর জ্বালায় জ্বলছে বিএনপি ও তারেক রহমান।
এই পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় গোপালগঞ্জ, তিন ঘণ্টায় বরিশাল, সাড়ে তিন ঘণ্টায় খুলনা। জ্বালারে জ্বালা, অন্তরে জ্বালা৷ ঢাকায় আবার মেট্রোরেল! এই মেট্রোরেল কে করেছে? শেখ হাসিনা করেছে। বিএনপি কিছুই করতে পারেনি। অন্তর জ্বালা তো থাকবেই। এখন শেখ হাসিনা করেছেন এটাই তাদের অন্তর জ্বালা ও বুকের ব্যথার কারণ। মানুষ খুশি অথচ এই দলটি অখুশি। শেখ হাসিনার দলে এত মানুষ কেন এটাই তাদের অন্তর জ্বালার কারণ।
সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতার সুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এই মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হবে। দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে খেলা হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে এবং স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সেই খেলার জন্য তৈরি ও প্রস্তুত হয়ে যান। নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। নিজেদের আচরণে ছাত্র রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করবেন। সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে আপনাদের এ অনুরোধ করছি। ছাত্র রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করলে আমাদের নেত্রীর সুনাম আরও বাড়বে।
শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে রয়েছে
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে দেশে-বিদেশে কত ষড়যন্ত্র, কত চক্রান্তের খেলা। তারা (বিএনপি) জানে যে, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সেজন্যই নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হারানো যাবে না। এ কারণেই চক্রান্ত করে ক্ষমতা থেকে হঠানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা বিদেশিদের দিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি প্রয়োগ করতে চাইছে। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার উন্নয়নের কৃতি তারা মুছে ফেলার চক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই এদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি ঘটেছিল। তিনি এসেছিলেন বলেই এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। তিনি না থাকলে এ দেশ কখনো উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হতো না। শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে না পারলে আজ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বপ্নে বিভোর হতে পারত না। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর ১৫ বছর পরের বাংলাদেশের মধ্যে একটি বিশাল রূপান্তর হয়েছে। এ উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আজ সারা বাংলাদেশ থেকে আসা তারুণ্যের ঢল এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আজ বঙ্গবন্ধুরকন্যার ডাকে সবাই একত্রিত হয়েছে। তিনি বারে বারে মৃত্যুমুখেও জীবনের জয়গান গেয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বারে বারে সৃষ্টির পতাকা উড়িয়েছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি সারা বিশ্বে মানবতার মা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আকাশে তিনি শান্তির পতাকা উড়িয়ে বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত হয়েছিলেন। গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মতো এত জনপ্রিয় নেতা আর একজনও আসেনি। গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক ও সাহসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম শেখ হাসিনা।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান তার এই বিএনপি জন্ম দিতে গিয়ে সেই অনুষ্ঠানে উচ্চারণ করেছিলেন যে, পাকিস্তানের মতো ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র বানাব। আজকের এই বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল।
জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টে কেক কেটে ভুয়া জন্মদিন পালন করে বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দিয়ে চেয়েছিল। সেই ইতিহাস আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ৪৮ বছর পর আজ ঐতিহাসিক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে দাঁড়িয়ে বলছি— রক্তাক্ত বিদায়ের ৪৮ বছর পরেও বঙ্গবন্ধু তোমাকে কেউ মুছে ফেলতে পারেনি।
এখনো তুমি বাংলার তারুণ্যের হিমালয়। যতদিন এ বাংলায় চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, পাখিরা গান গাইবে, নদীর কলরব, পাখির কলতান থাকবে… ততদিন এই কৃষ্ণচূড়া-শিমুলের বাংলায়, কৃষকের লাঙ্গলের ফলায় ও লালনের দোতারায় বঙ্গবন্ধু তুমি থাকবে। তোমার স্মৃতি, তোমার কৃতিত্ব ও বীরত্ব এই বাংলায় কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ করছে ছাত্রলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাও এতে উপস্থিত রয়েছেন।
নদী বন্দর/এসএইচবি