ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা এবং অবকাঠামোগুলো নির্মূল করতে গাজান অঞ্চলে অভিযান শুরু করেছে। আইডিএফ আরো জানিয়েছে, হামাস জিম্মিদের কোথায় রেখেছে, সে বিষয়ে সৈন্যরা কিছু তথ্য পেয়েছে। জিম্মিদের সনাক্ত করতে তথ্যগুলো তাদের সহায়তা করবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেছে।
সেখানে তারা লিখেছে, ‘ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল লঞ্চারগুলোতে হামলা চালিয়েছে।’ বিমান বাহিনী বলেছে, আইডিএফ গাজা উপত্যকায় স্থাল অভিযান শুরু করেছে। তারা ওই সব এলাকা থেকে সন্ত্রাস ও অস্ত্র নির্মূল করতে চেষ্টা করবে। এ ছাড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হবে।
হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাংশে নজিরবিহীন হামলা চালানোর এক সপ্তাহের মাথায় এই স্থল অভিযান শুরু হল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত শনিবারের ওই হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী কেবল আকাশপথেই গাজায় আক্রমণ চালিয়ে আসছিল। এবার তা স্থল যুদ্ধের রূপ নিল।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জাতিসংঘকে বলেছে, ওয়াদি গাজার উত্তরে বসবাসকারী প্রত্যেককে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তরিত করা উচিত।
জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র এ বিষয়টি জানান। জাতিসংঘ বলেছে, এই পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ। যা সমগ্র গাজা উপত্যকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ গাজা সিটিও অন্তর্ভুক্ত। ইসরায়েল ঠিক মধ্যরাতের আগে এই সতর্কতা দিয়েছে।
ইসরায়েলের মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের মানবিক পদক্ষেপের অংশ হলো প্রাথমিকভাবে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ। আমাদের লক্ষ্য জীবন বাঁচানো। বেসামরিকরা আমাদের শত্রু নয়।’পোস্টে জোনাথন আরও বলেন, সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কারণে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায় এবং আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতের আইনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আগে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল যে দাবি করেছে তাতে ওই অঞ্চলের অন্তত ১১ লাখ অধিবাসীকে সরে যেতে হবে। যা গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
জাতিসংঘ ইসরায়েলকে এ আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছিল। এদিকে, ইসরায়েলের এমন আল্টিমেটাম ‘ভুয়া প্রোপাগান্ডা’ বলে আখ্যা দিয়েছে হামাস। সেই সঙ্গে গাজাবাসীকে এই ‘ফাঁদে’ পা না নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে বলেছে তারা।
তবে গাজার উত্তরাংশের বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ অংশে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। বহু মানুষ জিনিসপত্র বেঁধে ট্রাকে অথবা অন্য কোনো উপায়ে চেষ্টা করেছে। অনেকে আবার থেকে যাওয়ার কথাও বলছিলেন। মোহাম্মদ নামের ২০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি তরুণ রয়টার্সকে বলেন, ‘চলে যাওয়ার চেয়ে এখানে থেকে মরা ভালো। আমি এখানে জন্মেছি, এখানেই মরতে চাই।’
জাতিসংঘের ইসরায়েলের এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়াল অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি বলেছেন, তাদের সামরিক বাহিনী ট্যাংক নিয়ে গাজায় অভিযান চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিনি রকেট হামলাকারীদের নির্মূল করা এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের উদ্ধার করা।
গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে, ইসরায়েলে এক হাজার ৩০০ জনেরও বেশি এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলার পর প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স
নদী বন্দর/এসএইচবি