দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানিআবারো হু হু করে বাড়ছে। যার ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। দেড় মাসের দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পর ফের আশ্বিনের বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার ফলে বাড়ছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। এই সময়ে জমিতে বিভিন্ন ধানসহ শীতকালীন আগাম সবজির আবাদ থাকায় এবারের বন্যায় কৃষক ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, গত কয়েক দিনে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় আবারো বাঁধ ও সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
বগুড়া: যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো এবং এসব এলাকার রোপা আউশ, মাষকলাই, মরিচ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া ধানসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি কমে আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গাইবান্ধা: গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। শুধু তিস্তা নদী বাদে বেড়েছে করতোয়া, ঘাঘট নদীসহ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। এদিকে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি।
কুড়িগ্রাম: ধরলার পানি নেমে যাওয়ার পর, এবার বিপদসীমা অতিক্রম করেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। দীর্ঘতম এ বন্যায় কুড়িগ্রামের ৬ লক্ষাধিক মানুষ তাদের ফসল, ভিটেমাটি, জমি, জমানো টাকা আর মজুদ খাবারসহ সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায়। এরই মধ্যে নতুন করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার কয়েকশ’ গ্রামের নিম্নাঞ্চল আবার প্লাবিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ: কয়েক দিন ধরে সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাজীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনা তীরবর্তী চর এলাকার মানুষ বিশেষ করে কৃষকরা আবারো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
নাটোর: আত্রাই নদীর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। অপরদিকে নলডাঙ্গার বারনই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল এই পয়ন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। গত বুধবার রাত ২টার দিকে পানির তীব্র স্রোতে পৌর এলাকার শোলাকুড়া মহল্লায় সিংড়া বলিয়াবাড়ি রাস্তার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মহেশচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি মহল্লার হাজার হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে নাগর নদের হিয়াতপুর নামক স্থানে সিংড়া-তাজপুর সড়ক ভেঙে যায়। এতে ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। উপজেলার ২ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ১ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত এক লাখ মানুষ।
নদী বন্দর/আরএম