মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে দুবাইয়ের এক্সপ্রো সিটিতে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এ সম্মেলনে প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও এসেছেন। সম্মেলনস্থলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু রক্ষার বিশাল এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা চীনের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান কেউ অংশ নিচ্ছেন না। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের রাজা চার্লসও সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যান্য দেশের মতো সম্মেলনে বাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছে। এ দলের প্রধান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।
সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৫২ বর্গমিটার আয়তনের একটি প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন সাইড ইভেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশমন্ত্রী।
বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে বিভিন্ন দেশ যেসব অঙ্গীকার করেছে তা বাস্তবায়ন কতদূর তা নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে। এছাড়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত প্রভাবগুলোর সাথে অভিযোজন নিয়েও আলোচনা হবে।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে একটি তহবিল গঠন চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হবে৷ তহবিল গঠনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে৷ এ সম্মেলনে এটি অনুমোদন হতে পারে। আগামী ১২ ডিসেম্বর এ সম্মেলন শেষ হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, নাকি জলবায়ুর ওপর শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত; তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। সম্মেলনে সেই বিভাজন এবার আরও স্পষ্ট হতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ২০২৩ সালের বৈশ্বিক জলবায়ু পদক্ষেপ বিষয়ক সংস্করণে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা না গেলে বিপর্যয় দেখা দেবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বিভিন্ন দেশ ও রাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি বাগাতে পারলে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখা যাবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সহনশীল পরিবেশের জন্য পরামর্শগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন ইমানুয়েল কারভিন স্টিয়েল বলেন, জলবায়ু বিষয়ক সচেতনতা সর্বত্র ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জ্বালানি এবং পরিবহন থেকে নির্গত ধোয়া থেকে যে দূষণ তা রোধ করা জরুরি। এবং এটিকে এমন একটি ব্যবস্থায় নিতে হবে না প্রকৃতির সাথে সহনশীল। সব অংশীজনের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা আমাদের যৌথ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সঙ্কট কাটানোর একটি সুযোগ।
কপ-২৮ এর সভাপতি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় তেল কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী সুলতান আল-জাবেরকে। ইতোমধ্যে সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
সুলতান আল-জাবেরকে বলেন, আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই। নির্গমন কমাতে আমাদের এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্টকটেকের প্রতিক্রিয়া হিসাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যা মানুষ, জীবন এবং জীবিকা রক্ষা করার ভূমিকা রাখবে।
১৭৬০ সালের পর ইউরোপে যখন শিল্প-বিপ্লবের সূচনা তখন থেকেই প্রকৃতির বিপদের শুরু। তখন থেকেই পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শুরু হয়। এর ফলে দিন দিন বাতাসের উষ্ণতা বেড়েছে; হয়েছে বায়ুদূষণ।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় অর্ধশত দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, দাবানল বেশি হচ্ছে। এ কারণে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
প্রথম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানির বার্লিনে ১৯৯৫ সালে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কপ-২১ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্যারিস চুক্তিতে অনুমোদন দেয়। এই প্যারিস চুক্তি ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় রাষ্ট্রগুলোর করণীয় নির্ধারণে একটি যুগান্তকারী চুক্তি।
নদী বন্দর/এসএইচবি