আটকে আছে যমুনা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিলম্ব হওয়ায় গত বছর ড্রেজিং হয়নি। চলতি বছর এখনও শুরু হয়নি টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি ওয়ার্ক। অথচ এই কাজের ডিজাইন শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। ওই সময় নদী যে অবস্থায় ছিল, বর্তমানে নদী সে অবস্থায় নেই। পলি পড়ে ভরাট হওয়া জায়গার পরিমান বেড়েছে। এতে টেন্ডার অনুযায়ি যে পরিমান মাটি কাটার কথা, তার চেয়ে বেশি ড্রেজিং করতে হতে পারে। এমনটি হলে ডিপিপি পুন:মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। ফলে বৃদ্ধি পাবে প্রকল্প ব্যয়।
জানা যায়, এই প্রকল্পের ঠিকাদাররা ড্রেজিং করার জন্য ড্রেজারসহ তাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন। টেন্ডার অনুযায়ি আটটি প্যাকেজে ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করতে হবে। গত বছর এই প্রকল্পের সবগুলো টেন্ডার একত্রে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে টাস্ক ফোর্স থেকে বলা হয়েছিল, পৃথকভাবে কাজ না করে একত্রে শুরু করার জন্য।সে মোতাবেক গত বছর নদী ড্রেজিং করা হয়নি। চলতি বছর একত্রে শুরু করা যাচ্ছেনা যৌথ প্রি ওয়ার্ক না হওয়ার কারণে। ঠিকাদাররা বলছেন, ড্রেজিং করার জন্য ড্রেজারসহ তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এক্ষেত্রে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হলে তাদের পক্ষে যথাসময়ে ড্রেজিং সম্পন্ন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদী ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য দু’টি প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। যার প্রথমটি হচ্ছে- ২১৫ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়টি ৩২০ কোটি টাকা। এই ড্রেজিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- যমুনার মাঝ বরাবর ক্ষীনকায় পানির প্রবাহকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করা। আর নদীর তীরের কাছে যে চ্যানেলটি রয়েছে তা ভরাট করে ফেলা। এতে করে যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধ পাবে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমে যাবে। তদুপরি, মাঝখান দিয়ে পানি যমুনা নদী প্রবাহিত হলে উভয় তীরের সম্পদ রক্ষা পাবে।
জানা যায়, প্রথম প্রকল্পের প্রতিরক্ষা কাজ কাউলিবাড়ী হতে শাখারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পের ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ ঠিকাদাররা শুরু করতে পারবে প্রি ওয়ার্ক সম্পন্ন হওয়ার পরই। দ্বিতীয় প্রকল্পের ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ চলতি বছর সম্পন্ন করার কথা। আর টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি ওয়ার্ক সম্পন্ন হলে ৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংংয়র কাজ শুরু হবে। দু’টি প্রকল্পে ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার ড্রেজিংয়র কাজের শুরুটা পিংনা এবং শেষ হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর সন্নিকটে অর্জুনা নামক স্থানে এসে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে পাউবো মহাপরিচালক প্রকৌশলী এ এম আমিনুল হক বলেছেন, যমুনা নদীর খনন কাজ কোনভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না। এ ব্যপারে স্থানীয় পাউবোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন নদী-খাল ড্রেজিং নিয়ে কোন অনিয়ম-দূর্নীতির সুযোগ নেই। যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে। তিনি জানান, নদ-নদী খননের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ রক্ষা, নৌপথ সচল করা, কৃষিকাজে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং নদীতে সারাবছর পানি ধরে রাখতে পাউবোর’র প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও রয়েছে। আমরা যমুনা নদীর খনন কাজ দ্রুত শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চাই।
পাউবো’র টাস্কফোর্স প্রধান এডিজি কাজী তোফায়েল হোসেন বলেন, যৌথ প্রি ওয়ার্কের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সার্ভের কাজ শুরু হবে। ইকো সাউন্ডের মাধ্যমে এই সার্ভে সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, গতবছর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ায় আমরা খনন কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। যাতে চলতি বছর সবাই একত্রে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, তিন বছর আগে এই প্রকল্পের ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ওই সময় নদীর যে অবস্থা ছিল, এখন সে অবস্থায় রয়েছে কিনা এটাও দেখা হবে। যদি পলির পরিমান বাড়ে, তাহলে মাটি খননের পরিমানও বাড়বে। আর এমনটি হলে ডিপিপি রিভিশন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। সবকিছু নিশ্চিত হতে পারবো আমরা সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পর।
এ ব্যপারে টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সহসাই যমুনা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হওয়া প্রয়োজন। ঠিকাদাররাও ড্রেজিং করার জন্য ড্রেজারসহ তাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন। যথাসময়ে খনন কাজ শুরু করা না হলে চলতি বছর এই কাজ সম্পন্ন করাটা কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
নদী বন্দর/এসএইচবি