ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আজ রাতেই ট্রেন বাংলাদেশে আসবে। প্রথম চালানে এক হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ আসবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
রোববার (৩১ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ট্রেডিং করপোরেশন আব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য সেহেতু আমরা ধরে রাখবো না। কাল থেকে আমরা ডিলারদের কাছ থেকে …জমা নেওয়া শুরু করবো এবং একদিনের মধ্যে…। আমরা ৪০ টাকা নির্ধারিত মূল্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ওপেন সেল করবো।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ঢাকায় ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করি, আমি বিশ্বাস করি ৬৪ জেলার অন্তত ৩০টি জেলায় পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় চলে আসবে।
তিনি বলেন, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ২৫ শতাংশ বাড়লেও আমাদের স্থানীয় বাজারে ২ থেকে ৪ শতাংশের বেশি দাম বাড়েনি। গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম আয়েলের দাম ১১ থেকে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমাদের আমদানিকারক এবং মিলমালিকদের সহযোগিতায় ১৬৩ টাকায় ১ লিটার এবং ১৪৯ টাকা খোলা বাজারে তেল বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সব জিনিসের দাম কমে গেছে। আপনারা যদি দেখেন সয়াবিন তেলের (লুজ) দাম প্রায় ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ প্রথম রমজান থেকে ১৮ তম রমজানে এই কম্পিরিজনেই দাম দেওয়া হয়েছে।
‘আমাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত আছেন। যদিও তিনি ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে সেটা প্রকাশ করায় অনেক বিতর্কের শিকার হয়েছেন। আমরা সরু চাল, চিকন চাল এবং মোটা চাল এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসে জাতভিত্তিক চালের নাম মিলার পর্যায়ে, পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি এবং খুচরা পর্যায়ে বিক্রির একটি রূপরেখা তৈরি হয়েছে’- বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে এটা কার্যকর করে জানিয়ে দেবো। আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে এটা কার্যকরী হবে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা বাজারদর সহনশীল পর্যায়ে রাখতে পেরেছি আশা করি আগামী ঈদ পর্যন্ত এটা ধরে রাখতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি আছেন। আপনারা জানেন তাদের সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। কীভাবে যৌক্তিক মূল্যটা দীর্ঘসময় ধরে রাখতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আছে। আপনারা অবহিত আছেন পরিবহন তার মধ্যে অন্যতম একটা চ্যালেঞ্জ। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি আমাদের বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে।
টিটু বলেন, আমরা এনবিআর’র সাথেও কথা হয়েছে আগামী বাজেটের আগেই এসেনসিয়াল কমোডিটি যেগুলো সেগুলো যেন সারাবছরের জন্য একটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। যাতে শেষ মুহূর্তে এসে আমাদের যেন পরিকল্পনার কারেকশন করতে না হয়। একই সঙ্গে আমাদের আমদানিকারক ও উৎপাদক আছে তাদের জন্য ১২ মাসের একটা পরিকল্পনা হলে সবার জন্য সুবিধা হয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের যে অবস্থাই হোক আমাদের আগামী দুই থেকে তিন মাস অর্থাৎ কোরবানির ঈদ পর্যন্ত আমাদের পণ্যের সরবরাহ বিশেষ করে ভোজ্যতেল যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে বা সাপ্লাই চেইনে আছে। চিনি নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা নাই। চিনি নিয়ে সকল মিলমালিক এবং পাইকারি বিক্রেতারা আশ্বস্ত করেছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েও কোনো সমস্যা হবে না। বাজারে কৃষিজ উৎপাদিত পণ্যের বাজার দরও অনেকটা যৌক্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে। কিছু পণ্যের যৌক্তিক যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার থেকেও কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এটা রমজানে অনেকের জন্য সাশ্রয়ী।
তিনি আরও বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে যে চাল, চিনি, তেল, ডাল ও ছোলা দেওয়া হচ্ছে এটাতে বাজারে, বিশেষ করে উপজেলা শহরগুলোতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেটার একটা সুফল বাজার পাচ্ছে। একই সাথে বাজারে নতুন সবজি ওঠায় সবজির বাজারেও স্বস্তি লক্ষ্য করছি। যদিও শহরের দু-একটা জায়গায় আপনারা একটু-আধটু সমস্যা খুঁজে পান।
গত বছরের আগস্টে ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সরকার ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় গত ৭ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয়। ভারতের এ নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম ওঠে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, বাংলাদেশকে ভারত ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেবে। অবশ্য ভারতের পেঁয়াজ না এলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে পেঁয়াজের দাম। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা ছিল এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ৫৫-৬০ টাকা।
নদী বন্দর/এসএইচ