নতুন জাহাজ যুক্ত হলেও মান বাড়েনি সরকারি যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসের। প্রতিবছরই কমছে যাত্রী সংখ্যা। নেই পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থাও। গত তিন বছরে লোকসান গুণতে হয়েছে অনন্ত ১০ কোটি টাকা। অনিয়ম-অসঙ্গতির কথা অস্বীকার করেনি কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, নতুন জাহাজ যুক্ত হলে লোকসান থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।
ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু স্টিমার সার্ভিস। স্বাধীনতার পর এমভি লেপচা, অস্ট্রিচ ও মাসুদের মতো প্যাডেল স্টিমার চলতে শুরু করে ঢাকা-খুলনা রুটে।
স্টিমারগুলো অকেজো হয়ে পড়লেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের বহরে যুক্ত হয়েছে এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি। এই জাহাজগুলো এখন চলছে মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত।
গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে যাত্রী ছিল ২৩ লাখেরও বেশি। আর আয় হয়েছে পাঁচ কোটি টাকার বেশি। ১৮-১৯ অর্থবছরে যাত্রী সংখ্যা কমে ৫ লাখের মতো। আয় হয় পৌনে ৫ কোটি টাকার মতো। গত বছর মহামারিতে বন্ধ থাকায় যাত্রী পরিবহন যেমন কমে তেমনি আয়ও কমেছে। গত তিন বছরে লোকসান প্রায় ১০ কোটি টাকা।
চাঁদপুর ঘাট থেকে যাত্রী তোলা হয় বিআইডব্লিউটিসির জাহাজে। টিকেটের জন্য ভিড় আছে। নিধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে টিকেট বিক্রির অভিযোগও আছে।
যাত্রীরা জানান, কোন সিরিয়াল নেই, মহিলারা কিভাবে টিকিট কাটবে? একটি পদ্ধতি করে দেয়া হোক- মেয়েদের এক জায়গায়, ছেলেদের জন্য অন্য জায়গায়। কষ্টের পর টিকিট কাউন্টারে পৌঁছে শুনতে হয় টিকিট নেই। তবে স্টাফরা অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে সিটের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকে।
অন্য লঞ্চে কেবিনগুলোতে টেলিভিশন থাকলেও বিআইডব্লিউটিসির জাহাজে নেই। কক্ষগুলোর লাইটের সুইচ, প্লাগ পয়েন্ট ভাঙলে সংস্কার হয় না দীর্ঘদিনেও।
স্টাফরা জানান, জাহাজের কোন স্টাফ সিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত না। তবে যাত্রীরা বলছেন, ডেকে জায়গা পেতেও চড়া দাম দিতে হয়েছে।
লোকসানের বড় কারণ তেলের খরচ।
স্টিমার স্টাফরা জানান, ঢাকা-বরিশাল রুটের প্রাইভেট লঞ্চের সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার তেল লাগে। সেক্ষেত্রে স্টিমারে যাওয়া-আসায় ৬ থেকে ৭ হাজার লিটার তেল খরচ হয়। সেই তুলনায় তেল খরচ খুব একটা বেশি যাচ্ছে সেটা মনে হয় না।
অসঙ্গতি যে নেই তা অস্বীকার করছেন না কর্মকর্তারা। তারা জানান, যদি কাউকে ধরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লোকসানের কারণ জানালেন এই কর্মকর্তা।
বিআইডব্লিউটিসি উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য/বাএ) শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, মূল টার্মিনাল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে লালকুঠি থেকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। যারা জানে তারাই শুধু সেখানে গিয়ে থাকে। সেই কারণেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা আশানুরূপ যাত্রী পাচ্ছি না।
তবে বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হলে সেবার মান বাড়বে।
শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ আরও বলেন, ওয়েস্টার্ন মেরিনে আমাদের দুটি জাহাজ সমাপ্তির শেষ পর্যায়ে আছে। বঙ্গমাতা ও বঙ্গতরী এগুলো খুবই আধুনিক জাহাজ। আমরা আশা করি, এই জাহাজগুলো আমাদের বহরে আসলে যাত্রীসেবা অনেক উন্নত হবে।
যাত্রী সেবার মান বাড়লে লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তারা।
নদী বন্দর / এমকে