চতুর্থ দফায় বন্যার কবলে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষেরা। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুই করছে। এতে তিস্তা ও ধরলা তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে তিস্তার বাঁধ। এ অবস্থায় নদীপাড়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে জেলার ৫ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবার।
শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। অপরদিকে, ধরলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। পাউবো বলছে, পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুই করছে। এতে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। পাশাপাশি গবাদি পশু হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপদে আছেন নদীপাড়ে বাসিন্দারা।
তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, নিজ গড্ডিমারী, সানিয়াজান ইউনিয়নের শেখসুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর ও গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় আবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিস্তা পাড়ের সায়েদ আলী বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে পানি উঠে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। গবাদিপশু নিয়ে আমরা বিপদে আছি।’ এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ‘উজানের ঢলে আবারো তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে অনেক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। গড্ডিমারিতে তিস্তা একটি বাঁধ ধসে যাওয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। অত্র ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি।’
লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি।’ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা আমরা জেনেছি। বর্তমানে বিপৎসীমা ১০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তীরবর্তী এলাকায় কিছু পরিবার পানিবন্দি হতে পারে। তবে এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
নদী বন্দর/এসএইচ