ইরানকে কড়া হুঁশিয়ার বার্তা দিলেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর নেতারা। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে ন্যাটো জোট বুধবার (১০ জুলাই) ইরানকে সতর্ক করেছে। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইরান রাশিয়াকে শত শত কামিকাজে ড্রোন সরবরাহ করেছে। একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, তেহরান মস্কোকে ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা বাড়ানোর কথা ভাবছে।
বুধবার ন্যাটোর নেতারা অভিযোগ করেন, সরাসরি সামরিক সহায়তার মাধ্যমে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধে ইন্ধন জোগাচ্ছে ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী ন্যাটোর নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার কাছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি সরবরাহ রুশ আগ্রাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ইরান রাশিয়াকে বিপুল সংখ্যক সারফেস টু সারফেস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস একই কথা বলেছিলেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তার কাছে এ ধরনের তথ্য রয়েছে কিন্তু বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছিলেন।
ইরান অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা রাশিয়ায় ইরানের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে ওয়াশিংটন ধরে নিয়েছিল যে, তেহরান মস্কোকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে চায়।
রয়টার্সে প্রকাশিত সাম্প্রতিক দুটি স্যাটেলাইট ছবিতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সম্প্রসারণ দেখা যায়। গবেষকরা এই বিষয়টিকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য হিসেবে মূল্যয়ন করেছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইরান রাশিয়ার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করবে।
রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র না দেওয়ার জন্য জি-৭ নেতারা ইরানকে সতর্ক করার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এবার ন্যাটো নেতাদের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা এলো।
গত জুনে জি-৭ নেতারা বলেন, আমরা ইরানকে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে সহায়তা বন্ধ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি সরবরাহ না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ এ পদক্ষেপ রুশ আগ্রাসনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করবে।’
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার থাকার পরও রাশিয়া এবং ইরান তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। তাদের পারস্পরিক বাণিজ্য ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা ৪০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম বলে স্বীকার করেছেন ইরানের কর্মকর্তারা।
তেহরান-মস্কো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের ব্যবহার বাদ দেওয়ার জন্য গত ডিসেম্বরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এটিকে উন্নয়নের ‘নতুন অধ্যায়’ হিসেবে ঘোষণা দেন। যদিও এ পদক্ষেপের বাস্তব অর্থনৈতিক গুরুত্বের চেয়ে প্রতীকী গুরুত্ব বেশি।
৭৫ বছরে পা দেওয়া ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন ওয়াশিংটনে চলছে। সেখানে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হামলা থেকে বাঁচতে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নদী বন্দর/এসএকে