আগামী ২ মাসের মধ্যে দেশের নদীর সঠিক সংখ্যা চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং সংকটাপন্ন নদ-নদীগুলোর দখল ও দূষণমুক্তকরণ নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যৌথভাবে প্রণয়নকৃত তালিকা জনমত ও আপত্তি দাখিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত আপত্তি গ্রহণ পূর্বক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শুনানি গ্রহণ করতে হবে।
তিনি এসময় ৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে আগামী ২ মাসের মধ্যে সময়ভিত্তিক, ব্যয় সাশ্রয়ী, কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে এবং পরবর্তীতে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদ করবেন।
উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীর তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করবে। প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর তালিকা করে দূষণ থেকে পরিত্রাণে কর্ম পরিকল্পনা করবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সব নদীর জন্য ‘হেলথ কার্ড’ প্রস্তুত করবে জানিয়ে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, যা নদীর প্রাণ সত্ত্বার পরিচয়। অভিযান পরিচালনায় ও পরবর্তীতে আবারও দখল-দূষণ রোধ করতে এলাকাবাসী, তরুণ প্রজন্ম, সামাজিক সংগঠন, এনজিওদের সম্পৃক্ত করতে হবে ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে। সব অফিসে প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের ফোল্ডার ও প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার পরিহার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ ঢাকা সার্কুলার নৌপথের প্রস্তাবনার সর্বশেষ অবস্থা ও এই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করবে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের আইনের সংশোধনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ব্যয়সহ চলমান ও বাস্তবায়িত নদী খনন প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তালিকা ও প্রভাব বিষয়ে মতামত ও প্রভাব প্রদান করতে হবে।
সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা কীর্তনখোলা, রূপসাসহ গুরুত্বপূর্ণ নদীসমূহের পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাপ্রশাসকদের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, অবৈধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধে এবং পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগের ব্যাপক প্রচলনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ক্যাম্পেইন করা হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী রক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানি বিশেষজ্ঞদের পরিমাপে দেশে মোট নদীর সংখ্যায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-৮৫৩৯/২০২১ এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের পরিচালনার সভায় নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডাব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় কমিশনাররা বক্তব্য দেন।
নদী বন্দর/এসএইচ