অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্যের জের ধরে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখ থেকে উচ্চারিত এই শব্দযুগল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও সৃষ্টি করেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার। অবশেষে রিসেট বাটনের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস যখন রিসেট বোতাম টিপানোর কথা বলেছিলেন, তখন তিনি দুর্নীতিবাজ রাজনীতি থেকে একটি নতুন সূচনা করতে চেয়েছিলেন; যা বাংলাদেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করেছে।’
প্রেস উইং বলছে, ‘বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাসকে মুছে ফেলার অর্থ তিনি (ড. ইউনূস) করেননি।’
সফটওয়্যার পুনরায় সেট করার জন্য আমরা রিসেট বোতাম চাপি। এটি হার্ডওয়্যার বা কাঠামো পরিবর্তন করে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের কাঠামো তৈরি করেছে।
মূলত দেশের ‘ব্যবস্থা’ পরিবর্তনের কথা বুঝানো হয়েছে বলে ব্যাখ্যায় বুঝানো হয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সাক্ষাতকারটিকে কিছু মানুষ ভুল ব্যাখ্যা করছে বলেও প্রেস উইং মন্তব্য করেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে ৮ আগস্ট ঢাকায় আসার পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা, প্রথম স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘প্রফেসর ইউনূস মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ নাগরিক কমিটি গঠন করেন, যেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচারণার ঘোষণা দেয় এবং শুরু করে। তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করার জন্য বাংলাদেশ নিউজলেটার প্রকাশ করেন।’
এদিকে, মঙ্গলবার নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ‘ঠিকানা’র ইউটিউব চ্যানেলে খালিদ মহিউদ্দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিসেট বাটনের ব্যাখ্যা দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, রিসেট বাটন বলতে স্যার (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) যেটা বলেছেন— তা হচ্ছে ‘ব্যবস্থা’। এটা কোনোভাবেই ৭১ নয়, কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধ নয়।
তিনি বলেন, যে ব্যবস্থা দিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার তৈরি হয়, সেই ব্যবস্থাকে রিসেট করার কথা বলেছেন স্যার। সেই ব্যবস্থার ওপর ‘রিসেট বাটন’ টেপা হবে, আমরা একটা ‘নতুন ব্যবস্থা’র ভেতরে ঢুকব’।
এ সময় মাহফুজ আলম তার ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, আন্দোলনে নাহিদ ইসলাম যে এক দফা ঘোষণা করেছিলেন, যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, স্যার মূলত সেই ব্যবস্থার কথাই বলেছেন। ১৯৭১ ও মুক্তিযুদ্ধ সরকার ও আন্দোলনকারীদের কাছে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের সবার অবস্থান খুবই স্পষ্ট যে- ১৯৭১ আমাদের জন্য একটা মাইলস্টোন। ওখান থেকে আমরা শুরু করব। শুধু ওখান থেকেই শুধু নয়, আমাদের একটা বিষয় অনালোচিত ছিল ‘৪৭-এর প্রশ্ন। আমরা ৪৭, ৭১ ও ২৪ কে এক সুতোই গাঁথার চেষ্টায় আছি।
সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, পলিটিক্যাল কমকিউনিটি আকারে বাংলাদেশের জনগণ যে লড়াইটা করেছিল বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান, এই লড়াইটাতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। ৭১ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নদী বন্দর/এসএইচ