বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বিগত সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার এদেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত দুদিন ব্যাপী ‘অর্থনীতির পুনর্বিন্যাস বিষয়ে টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ’ সংক্রান্ত কনফারেন্সের প্রথম সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
কনফারেন্সের প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক ডাইরেক্টর জেনারেল ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কে এ এস মুরশিদ।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান এবং মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিগত সময়ে যাদের পেট্রোনাইজ করা হয়েছে তারা মার্কেটে টিকে ছিল। আমাদের সার্বিকভাবে ম্যাইক্রে ইকোনিমি নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি সংশোধন করতে হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনঃশোধন (রিসেট) করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারকে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। মেজর ডিরেগুলেশন প্রয়োজন।
ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ওপরে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি ও অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা রেগুলেশন। ফ্রি মার্কেটের কথা বলে ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাজারকে উদার করতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে রাজস্ব আসবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বাড়াতে হলে ডিরেগুলেশন করতে হবে।
উদাহারণ দিয়ে খসরু বলেন, ‘আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম পোশাকে ইউডি এটা ইপিবিতে ছিল। ইপিবিতে থাকলে যা হয়, ওইখানে আমলাতন্ত্র আছে-দুর্নীতি হয়। রপ্তানিকারকরা আমার কাছে এলেন। তাদের বললাম, এটা যদি ইপিবি থেকে নিয়ে বিজিএমইএতে দিয়ে দেই, আপনারা কী নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? তখন ব্যবসায়ীরা রাজি হলেন। আমি এটা ইপিবি থেকে বিজিএমইকে দিলাম। আজ পর্যন্ত এটা ভালোভাবে চলছে। অনেকগুলো কাজ সরকার যেগুলো করছে তার কিছু বের করে এনে ট্রেড বডিকে দিয়ে দিতে হবে।’
মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখনই সরকারের উচিত চিফ ট্রেড নেগোসিয়েটর অফিস তৈরি করা। যাতে ট্রেড পলিসিকে ওয়েল কর্ডিনেট করা যায়। প্রত্যেক যায়গায় যাতে সমন্বয় করা যায়।
সেলিম রায়হান বলেন, পোশাকের বাইরে শ্রমঘন শিল্পে আমাদের যেতে হবে। দক্ষতা ভিত্তিক পণ্য ও সেবার দিকে আমাদের যেতে হবে। পোশাক খাতেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমাদের নীতিমালাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। আমরা দেখি একটি নীতি রপ্তানিকে উৎসাহিত করে, আবার আরেকটা নীতি রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
নদী বন্দর/এবি