রাজধানীবাসীর প্রথম পছন্দ ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি। কারণ, এখানে পাওয়া যায় হরেক রকমের ইফতার পণ্য; যা অন্য কোথাও মেলে না। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে বড় বাপের পোলা, সুতি কাবাব, মুখরোচক বিরিয়ানি আর শাহী হালিম ও জিলাপির জন্য বিখ্যাত। এখানে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা এবারও মুখরোচক সব খাবার বিক্রি করছেন। রমজানের প্রথম দিনেই জমজমাট ঐতিহাসিক এই ইফতার বাজার।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে চকের ইফতার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নানা রকম ইফতার সাজানো রয়েছে। কেউ ব্যস্ত হাঁকডাক দিয়ে বিক্রিতে, আবার কেউ ব্যস্ত প্যাকেট করতে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে ক্রেতা আসছেন। আর তারা পছন্দের খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কবুতরের রোস্ট বিক্রি করছেন মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকায় প্রতি পিচ বিক্রি করছি। প্রথম দিনের ক্রেতাদের ভিড় ভালোই। যেমন ক্রেতা আছে, তেমনি অনেকে ভিডিও করতে এসেছে।
এদিকে চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’— নামক বিভিন্ন পদের খাবারের মিশ্রণে মুড়িভর্তার বিশেষ এক খাবার নিয়ে চারদিকে ব্যাপক শোরগোল দেখা গেছে। সেখানে প্রতি কেজি এই মিশ্রিত খাবারের দাম ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউ ২৫০ গ্রাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চকবাজারের শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি ধরে। বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত বছরে দুই কেজি ওজনের জিলাপি বিক্রি করেছি। এবারও করব। আজকে প্রথম তাই এতো বড় করা হয়নি। তবে এখন যা আছে তা ৬০০ গ্রামের ওপরে হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চকবাজারের আরেক বিখ্যাত খাবার সুতি কাবাব। গরুর সুতি কাবাব কেজি ১২০০ টাকা এবং খাসির সুতি কাবাব ১৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শাহি ছোলা ৩০০ টাকা, ঘুঘনি ২০০ টাকা, চিকেন আচারী ১২০০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারী ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকেন রোল ৫০ টাকা, হালিম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি বক্স বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া, চিকেন টিক্কা, চিকেন গ্রেভি, চিকেন ড্রামস্টিক, চিকেন কাটলেট, কিমা পরোটা, পনির পরোটা, দই বড়া, রস বুন্দিয়া, মুরগি মোসল্লাম, বিফ শিক কাবাব, বোরহানি, ডিম চপ, ভেজিটেবল রোল সবই পাওয়া যাচ্ছে। তা ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বোরহানি বোতলবেধে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা।
ইফতারি কিনতে আসা পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া বলেন, প্রথম রোজা তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করব। এখানে চলে আসলাম। দেখি কী নেওয়া যায়, তবে এখান থেকে হালিম, জিলাপি, ঘুঘনি, কয়েক ধরনের কাবাব নিয়ে যাব।
এখানে ইফতার সামগ্রীর দাম কেমন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি জিনিসের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। তবে ছোট-ছোট জিনিসগুলোর দাম তেমন বাড়েনি।
জিগাতলা থেকে আসা রুহুল আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি এখান থেকে সুতি কাবাব নেওয়ার জন্য এসেছি। কয়েকটা দোকান দেখেছি, তারা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছে, হাফ কেজি নিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, মূলত ইফতারে চকবাজারের কোনও আইটেম না থাকলে অপূর্ণ লাগে। তাই এখানে ইফতার কেনার জন্য চলে আসলাম।
নদীবন্দর/এএস