হাঁসের ডিম বিক্রি করেই কোটিপতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শনির হাওরপাড়ের এজাহারুন মিয়া। তার খামারের ডিম দেশেই বাইরেও যাচ্ছে। এক সময়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান এজাহারুন মিয়া এখন তাহিরপুরের বিত্তশালীদের একজন।
২২ বছর আগে (১৯৯৮-৯৯ সালে) হাওরপাড়ের দুতমা গ্রামের হাঁসের খামারি রজব আলীর খামারের হাঁস দেখাশুনার চাকরি করতেন জীবনসংগ্রামী তরুণ এজাহারুন মিয়া। দুই বছর ওখানে চাকরি করার পর আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ৩৫০টি হাঁস নিয়ে খামার করেছিলেন তিনি।
কয়েক মাসের মধ্যেই অজানা রোগে একে একে তার সকল হাঁস মারা যায়। ঋণগ্রস্ত এজাহারুন স্ত্রীসহ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেসে চাকরি নেন। ওখানে প্রায় ১২ বছর দুজনে চাকুরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে হাঁসের খামার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আবার স্ত্রী রুজি আক্তারকে নিয়ে গ্রামে ফিরেন।
এবার ২৫০টি হাঁস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এই খামারি। এ পর্যায়ে তিনি অপেক্ষাকৃত বড় জাতের হাঁস কিনে ডিমের ব্যবসার দিকে নজর দেন। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অপেক্ষাকৃত বড় জাতের যেসব হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয়। আশ্বিন মাসে সেগুলো ৫০০-৫২০ টাকায় কিনে এনে লালন-পালন করেন।
কার্তিক মাস থেকে হাঁসের পাড়া ডিম বিক্রি শুরু হয়। বৈশাখ মাস পর্যন্ত ডিম বিক্রি করে প্রথম বছরেই ভালো লাভ করেন তিনি। বৈশাখ মাসের পর ডিম পাড়া ছাড়লে হাঁসগুলো একটু কম দামে ৪০০-৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। তাতেও বহু টাকা লাভ হয় তার।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি এজহারুনকে। গেল বছর ৩৬ লাখ টাকার ডিম বিক্রি করেছেন এই খামারি। এখন খামারে হাঁস আছে এক হাজার ৮৫০টি। এরমধ্যে প্রতিদিন ডিম পাড়ে এক হাজার ৬৫০টি হাঁস।
তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, একসময় এজহারুনের কিছুই ছিল না। এখন সবাই তাকে সবাই হাঁস খামারী এজহারুন বলেই চিনে।
তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু আহমেদ বলেন, ‘আমিও এজহারুনের মত একটি হাঁসের খামার দিয়েছি। কিন্তু খামারের খরচ অনেক বেশি। সরকার যদি হাঁস খামারীদের ঋণ দিত, তাহলে হয়তো আমার জীবনও বদলে যেত’।
কোটিপতি এজহারুন বলেন, ‘একসময় আমার কিছু ছিল না। বাবা ও ছোট ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন হাঁসের খামার করে আমার সব হয়েছে। কোনো কিছুর আর অভাব নেই’।
তিনি আরও বলেন, কোনো সময় যদি দেখি কেউ সমস্যায় পড়েছে তাদের সাহায্য করি। খামারের ডিম ভৈরব, ময়মনসিংহ, রাজধানী ঢাকায় যায় এমনকি আমার কাছ থেকে ডিম কিনে বিদেশেও রফতানি করা হয়ে থাকে। তার খামারে কাজ করেও অনেকে হাঁসের খামারি হয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান দাবি করলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ হাওরের এই জেলায় হাঁসের খামারিদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছে। আর খামারীদের ঋণ দেয়া প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
নদী বন্দর / জিকে