চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট ছাড়াই ২১ পদে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) শেষ দিন পর্যন্ত প্রত্যেক পদের বিপরীতে একজন করে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এদিন যাচাই-বাছাইয়ে তাদের প্রত্যেকের মনোনয়ন ফরম বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোট ছাড়াই সব প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ মোট ১৪টি পায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। সহ-সভাপতি, সহ সাধারণ সম্পাদকসহ ৭টি পদ পায় জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা।
এবার আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক পদে হাসান আলী চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে কাজী মো. সিরু এবং সহ-সভাপতি পদে আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সহ-সম্পাদক পদে ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আশরাফী বিনতে মোতালেব এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদে মঞ্জুর হোসেন নির্বাচিত হচ্ছেন। এছাড়া সদস্য পদে আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জেলা আইনজীবী সমিতির তফসিল ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। এদিন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বিএনপি ও জামায়াতপন্থি ছাড়া অন্যান্য আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী ও সভাপতি পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, আইনজীবী সমিতির ৯৮ শতাংশ সদস্যই চেয়েছিলেন ভোট দিতে। কিন্তু ভোটের ওপর আস্থা না থাকা কয়েকজন সমিতির সোনালী ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে তারা এমনটি করেছে। শুধু আওয়ামী লীগপন্থি না এলডিপিপন্থি আইনজীবীকে তারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাতেও কোনো সুরাহা মেলেনি।
এলডিপি সমর্থিত আইনজীবী ও সভাপতি পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক প্রার্থী ও শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি বর্তমানে জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর। বৃহস্পতিবার আমি ফরম নিতে গেলে সেখানে থাকা একদল লোক আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তারা ২১টি পদে ২১টি ফরম বিক্রি করেছে। বাধা দেয়ার সময় তারা বলেছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না। আমি তো ফ্যাসিবাদের দোসর না। আমি একজন পিপি হয়ে ফরম নিতে পারিনি। সমিতির ইতিহাসে এরকম কোনো নজির নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) আওয়ামীপন্থি আইনজীবী সভাপতি প্রার্থী আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফখরুদ্দিন চৌধুরীসহ চারজন সই করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মকবুল কাদের চৌধুরীর কাছে।
এসব বিষয়ে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমেদ বলেন, প্রত্যেক পদের বিপরীতে একজন করে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে এগুলো সঠিক পাওয়া গেছে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে পাঁচ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। এর দুই মাসের মাথায় ১৬ এপ্রিল জেলা আইনজীবী সমিতির ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যেক পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোট হবে না।
নদীবন্দর/ইপিটি