রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন চেম্বার বিচারপতি। একইসঙ্গে জামিন স্থগিতের আবেদনের শুনানি আগামী রোববার (৪ মে) ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘রোববার শুনানি হবে। শুনানি আজকে হয় নাই, আদালত রোববার শুনবে এটা।’
এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আদেশের পর তার আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, নিম্ন আদালতে জামিন না মিললেও উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। কিন্তু তিনি সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না। কারামুক্তিতে বাধাও নেই। সমস্যা কাগজপত্র নিয়ে।
চিন্ময় দাসের আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট থেকে অর্ডারটি (আদেশ) নিম্ন আদালতে যাবে। যা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গত পাঁচ মাস আগে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন হিন্দু ধর্মীয় এই নেতা।
অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গত পরশু ওনার (চিন্ময়) মা এবং আমি কারাফটকে গিয়ে দেখা করেছিলাম। উনি মোটামুটি ভালো আছেন। তবে শরীরটা আগের চেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ৭ কেজি ওজন কমেছে। আমি ওইদিনই আশ্বাস দিয়েছিলাম জামিন হবে তার।
এর আগে, এদিন দুপুরে বিচারপতি আতোয়ার রহমান খান ও আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশের পর ৩১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ছাড়াও আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। এরপর রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় গত ২৫ নভেম্বর তাকে ঢাকায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
আদালত চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে সেদিন চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময়ের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত চত্বরের বাইরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই কারাগারে আছেন চিন্ময়। গত ২ জানুয়ারি চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী।
নদীবন্দর/এএস