রাশিয়ায় মুখের পুনর্গঠনের প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুখ হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণ। বুধবার (৭ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
এ সময় খোকনের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শামীমা সুলতানা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খোকনের নিচের চোয়ালে টাইটেনিয়ামের পাত বসানো হয়েছে। অপারেশনের সময় তার মুখ থেকে ছররা গুলির তিন থেকে চারটি অংশ বের করা হয়। ভাষা জানার সুবাদে রাশিয়ায় তার সঙ্গে থেকে চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেছেন ডা. মাহমুদুল হাসান।
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খোকনকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। দেশটির রাজধানী মস্কোর ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক অব লোমোনোসোভ হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন খোকন। গুলির আঘাতে তার মুখের একটি বড় অংশ হাড়সহ নষ্ট হয়ে যায়। তার ওপরের ঠোঁট, মাড়ি, নাক, তালু—এগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
আঘাতের ধরন গুরুতর এবং আহত খোকনের মুখ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল হওয়ায় তার চিকিৎসার ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়। দীর্ঘ চেষ্টার পর একপর্যায়ে এই বিষয়ে দক্ষ মস্কোর ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক অব লোমোনোসোভ হাসপাতাল খোকনের মুখ পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জটি নিতে সম্মত হয়।
চিকিৎসকদের মতে, খোকনের মুখের গঠন পুনর্গঠনে দ্বিতীয় ধাপের সার্জারি হবে সবচেয়ে জটিল। এতে উপরের চোয়াল (ম্যাক্সিলা) রিকনস্ট্রাকশন করা হবে, যা তার মুখমণ্ডলের চূড়ান্ত অবয়ব নির্ধারণ করবে। এই অপারেশনটি রাশিয়ার একজন জাতীয় অধ্যাপক ও আরও দুজন অভিজ্ঞ সার্জন যৌথভাবে পরিচালনা করবেন বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় ধাপের সার্জারি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময় খোকনের বাম চোখের এনুক্লেশন (চোখের বল সম্পূর্ণ অপসারণ) করা হবে। এরপর তৃতীয় ধাপে তার নাকের পুনর্গঠন (নাক কনস্ট্রাকশন) করা হবে, যা সম্পন্ন হবে বুকের পাঁজরের হাড় ব্যবহার করে। এই ধাপটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে খোকন চন্দ্র বর্মন সুস্থ আছেন এবং তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নদীবন্দর/জেএস