বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্টার সেন্টার’-এর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
কী আলোচনা হলো সেখানে? ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তা সবিস্তারে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্যটি গণতন্ত্রায়ণ।’
মঈন খান বলেন, ‘নির্দিষ্টভাবে তারা (কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দল) যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছেন, সেটা হচ্ছে নির্বাচনে তারা হয়তো মনিটরিং করতে আসতে পারেন। যদি সেটা হয়, সেটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে এবং সেটা কখন- মূলত এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
কার্টার সেন্টারের ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জোনাথন স্টোনস্ট্রিট ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর তারা শরিফ, মাইকেল বালদাসারো, সাইরাহ জাহেদি, ড্যানিয়েল রিচার্ডস ও কাজী শহীদুল ইসলাম।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন- আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং দলের চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা বিষয়ে মঈন খান বলেন, ‘দেখুন আমি কারও সমালোচনা করতে চাই না। একটা ছোট উদাহরণ দিচ্ছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি হয়েছে, আমি তাদেরকেও বলেছি, আমরা এরশাদের পতনের সময় দেখেছিলাম একটি কেয়ারটেকার সরকার এবং সেটাও কিন্তু একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারটাও কিন্তু ৯০ দিনের মাথায় বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল এবং আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ কিন্তু সমালোচনা করে না।’
তিনি বলেন, ‘কাজেই এটা বুঝতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে গেলে যে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি নিতে হবে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। এখন ইতোমধ্যে ৯ মাস হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো মানুষের আলোচনায় আসবে। আমরা যদি নাও করি, মানুষ চুপ করে থাকবে না। আলোচনা হয়েছে কত দ্রুত এটা করা যায় এবং বিএনপি কখন এই নির্বাচনটি প্রত্যাশা করছে।’
নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির স্পষ্ট বক্তব্য ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা বলেছি, এই বছরের শেষ নাগাদ যদি নির্বাচন হয় তাহলে এটা জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা বিশ্বাস করি অহেতুক যদি বিলম্ব হয়, যে সমস্যাটি আপনারা দেখতে পারছেন, আজকে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, সেটা কিন্তু আজ থেকে ৯ মাস আগে ৫ আগস্টের যে পরিস্থিতি ছিল তার থেকে ভালো নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজেই যদি দেশের স্থিতিশীলতা কোনো কারণে বিঘ্নিত হয়, তাহলে কিন্তু এটা ১৮ কোটি মানুষের জন্য সুখকর হবে না। সেজন্য একটি কথা আমরা জোর দিয়ে বলেছি, জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্ধারিত হতে পারে একমাত্র একটা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।’
মঈন খান বলেন, ‘সেই নির্বাচনটি যত শিগগিরই হয় ততই ভালো। আমরা বিশ্বাস করি, সেটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সেই কথাটি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে বলেছি।’
নদীবন্দর/জেএস