1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
সর্বনাশা ফারাক্কায় অভিশাপে রূপ নিচ্ছে আশীর্বাদের পদ্মা - Nadibandar.com
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
  • ৩ বার পঠিত

ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে দেশের অন্যতম নদী পদ্মার পানি সমতলের উচ্চতা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্য নদীগুলোর ওপর। ফলে বর্ষা মৌসুমে যেমন বাড়ছে ভাঙনের প্রবণতা, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে ক্রমেই পানির অভাবে মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পদ্মার অববাহিকায় থাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে গত ৪৯ বছর সময় ধরে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষ তথা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ফারাক্কা দিন দিন গ্রাস করছে এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার। সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি নিঃস্ব মানুষগুলোর করুণ আর্তনাদ প্রতিনিয়তই সৃষ্টি করছে শোকাবহ পরিবেশ।

ভারত থেকে বয়ে আসা গঙ্গা নদী বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ঢুকে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। এই নদীকে কেন্দ্রে করেই একসময় আবর্তিত হতো এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে সময়ের ব্যবধানে এই নদী এখন এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ। ১৯৭৫ সালে ভারত এই নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর বদলে যেতে থাকে এই নদীর গতিপথ। আবার বর্ষা মৌসুমে ছেড়ে দেওয়া পানিতে একদিকে যেমন নদীগর্ভে বিলীন হয় গ্রামের পর গ্রাম, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল পরিণত হয় ধূ-ধূ বালুচরে।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চর এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, একযুগ আগে পদ্মা নদীতে মাছ ধরে সংসার চলতো এলাকার হাজারো মানুষের। কিন্তু এখন আর তা হয় না। কারণ বছরের অর্ধেকের বেশি সময় নদীতে পানি থাকে না। এতে আমরা মাছ ধরতে পারি না। আর বন্যার সময় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয় ভারতীয় সরকার, তখন এই এলাকায় বন্য হয়ে যায়। ভাঙন দেখা যায়। এতে প্রতিবছরর আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙতে হয়। এ সমস্যার জন্য দায়ী ফারাক্কা বাঁধ।

শিবগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক তসলিম উদ্দিন বলেন, মরণ বাঁধ ফারাক্কা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের দুঃখ দিন দিন বাড়ছেই। এ বাঁধ ভারত সরকার তৈরি করার পর থেকে পদ্মার ভাঙনে বেশ কয়েকবার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, দুর্লভপুর, পাঁকা, উজিরপুর, সুন্দরপুর, চরবাগডাঙ্গা, আলাতুলি, দেবিনগর, শাজাহানপুর, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশির ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

সুজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন বাড়ছে পানির সংকট। নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ধীরে ধীরে মরুকরণের দিকে এগুচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে শুধু শহরেই দেখা যেত পানি সংকট। কিন্তু এখন গ্রামেও দেখা দিয়েছে এই সমস্যা। কারণ আমাদের এই জেলার কোনো নদীতেই পানি থাকে না। এতে দিনে দিনে অস্বাভাবিকভাবে নিচে নামছে পানির স্তর। এখনই এই সমস্যার সমাধান না হলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, ভূমি ও পানি সমতলের সর্বনিম্ন স্তরের যে ব্যবধান সেটা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীর পাড়ের যে স্থিতিশীলতা তা হ্রাস পাচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছেই। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি দেওয়ার কথা, গত ২৫ বছরের বেশিরভাগ সময়ই সেই পরিমাণ পানি দেয়নি ভারত।

তিনি আরও জানান, পানির যে প্রবাহ সেটার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সরাসরি সর্ম্পক রয়েছে। গত ২৫ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ার কারণে তাপমাত্রা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে এবং পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়নে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

নদীবন্দর/এসএকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com