বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন দাবি করেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ। এই হামলার সঙ্গে শ্রমিক দলের কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি তার।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নগর ভবনের ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব দাবি করেন ইশরাক।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছিলেন ঢাকাবাসীর ব্যানারে তার সমর্থকরা। এসময় সেখানে একদল সশন্ত্র লোক গিয়ে বিএনপির স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে ইশরাকের দাবি, ‘বিএনপির স্লোগান ব্যবহার করে হামলা চালিয়ে দলকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনসহ সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে জনগণের সেবাদান কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের কারণে যে স্থবিরতা বিরাজমান ছিল, তা আমরা দৃঢ় মনোবল, সাংগঠনিক ঐক্য এবং জনতার সহযোগিতায় কাটিয়ে উঠেছি। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা জনগণের দৈনন্দিন ও জরুরি সেবাদান কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছি, যার ফলে নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ অগ্রগতিকে ব্যাহত করতেই আজ একটি সুপরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
ইশরাকের অভিযোগ, ‘নগর ভবনে বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে একটি নির্মম হামলা চালানো হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল আমাদের আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা পরিচিত নেতাকর্মীদের হত্যা করা। এই বর্বরোচিত হামলায় তিনজন বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং আরও অন্তত ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
তার আরও অভিযোগ, ‘হামলাকারীদের হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, হাতুড়ি, দেশীয় অস্ত্র ছিল, এমনকি একজনের কোমরে পিস্তলও দেখা গেছে। একজন নেতাকর্মীকে ছুরি দিয়ে ফুসফুসে আঘাত করা হয়েছে, যার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই হামলা ছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারার অপচেষ্টা— প্রথমত, আমার নাম ব্যবহার করে আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে এটিকে বিএনপির গ্রুপিং হিসেবে প্রমাণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা; দ্বিতীয়ত, জনগণের স্বস্তিতে সেবা গ্রহণে বিঘ্ন ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া।’
ইশরাক বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই— এই সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া রুবেল এবং কর্মচারী আরিফুজ্জামান প্রিন্স। তারা বিগত আওয়ামী সরকারের মেয়র সাঈদ খোকন ও মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধা আদায় করেছেন এবং তাদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে শতাধিক অস্ত্রধারী বহিরাগত মুখোশধারী সন্ত্রাসী নগর ভবনে প্রবেশ করে এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। আমার নামে একটি পক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এখানে যারা হামলা করেছে, তারা শ্রমিক দলের কেউই না।’
কর্মকর্তা কিবরিয়া রুবেল ও কর্মচারী আরিফুজ্জামান প্রিন্স স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইশরাক বলেন, ‘আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি, এই হামলার পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। নগর ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইল ফুটেজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের চিহ্নিত ও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যতক্ষণ না এই অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়, আমরা আন্দোলন থেকে একচুলও পেছাবো না।’
এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. সুমন ভূইয়া বলেন, ‘আমি আসলে আজকে যাইনি নগর ভবনে। তবে যতটুকু জানি, যেদিন সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেদিন প্রশাসক এবং প্রকৌশল বিভাগের লোকজন নগর ভবনে ঢুকতে পারবে না। কিন্তু আজকে প্রকৌশল বিভাগের লোকজন জোরপূর্বক অফিস করতে যায়। সেখানে আরিফুজ্জামান প্রিন্স বহিরাগতদের নিয়ে এই কাজে সহযোগিতা করে। সেটা নিয়ে মারামারি হয়েছে। তবে প্রিন্স আমাদের শ্রমিক দলের কেউ না। সে দাবি করে। কিন্তু তাদের কমিটি আমরা অনুমোদন দেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরিফুজ্জামান প্রিন্সের সঙ্গে বহিরাগতদের হামলায় আরিফ চৌধুরীসহ শ্রমিক দলের অনেকে আহত হয়েছেন।’
ইশরাক হোসেনের লোকজনরা দাবি করেন, ‘স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠতম হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী রুবেলের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।’
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরীও দাবি করেন, ‘ঢাকাবাসীর ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য দুদকে অভিযুক্ত সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আসিফের ঘনিষ্ঠ রুবেল বহিরাগতদের সংগঠিত করে এই হামলা চালায়।’
মঙ্গলবার এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি আছেন। অন্যদিকে, হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ।
নদীবন্দর/ইপিটি