বিচারক হিসেবে ‘বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায়’ দেওয়া এবং ‘জাল রায়’ তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহ এই আদেশ দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন জানান।
দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছর ২৭ অগাস্ট শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
এর আগে, (২৪ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির নিজবাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
অবসরে যাওয়ার কয়েক দিন আগে দেওয়া এক রায়ে খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন, যা দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের জালিয়াতি, সরকারি সম্পদ অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ।
গত বছর আগস্টে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আদালতে এসব অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানায়। সংগঠনটি তাকে ‘বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারিগর’ হিসেবে উল্লেখ করে।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এবং অবসরের পর তার একাধিক রায় ও কর্মকাণ্ড বিচারাঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে উপেক্ষা করে পদোন্নতি পান, সরকারের পক্ষপাতমূলক রায় দেন, এবং ট্রাস্টি তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত চিকিৎসা করান।
এ ছাড়া, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করা রায়, আগাম জামিনের এখতিয়ার হাইকোর্ট থেকে কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ একাধিক ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এ বি এম খায়রুল হক। ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যান।
নদীবন্দর/জেএস