গাজা উপত্যকার মানবিক সংকট এখন চরম পর্যায়ে। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজনই বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছেন। খাদ্যের অভাবে মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছেন।
সোমবার (৪ আগস্ট) আরও ৫ ফিলিস্তিনি না খেতে পেরে মারা গেছেন। এ অবস্থায় মিসর ও জর্ডান সীমান্তে প্রায় ২২ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও, ইসরায়েল সেগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীরাও খাবার পাচ্ছেন না। তাদের অনেকে না খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
ইউএনআরডব্লিউএর এক কর্মী মানার জানান, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি—আজ কী হবে জানি না। আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তারপর থেকে কোনো নিরাপদ আশ্রয় পাইনি। সব সময় বোমা আতঙ্ক। আবার বাস্তুহীন হওয়ার ভয়। খাবার নেই, পানিও নেই।
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা থেকে যে ক্ষুধার খবর আসছে, তা তাঁবুতে বোমা ফেলার মতোই ভয়ংকর। শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, শিশুরা শুধু বোমার ভয়েই আতঙ্কিত নয়। যদি বেঁচে যায়, তাদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করাও কঠিন হয়ে যাবে।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, গত শুক্রবার মাত্র ৭৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরায়েল। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ দরকার। গাজার বহু শিশু যুদ্ধ শুরুর আগেই নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
উত্তর গাজার একটি স্কুলে গৃহহীন মানুষদের জন্য তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা যায়, এক মা সামাহ মাতার কোলে তার ছয় বছরের ছেলে ইউসুফ। ইউসুফের ছোট ভাই আমিরের বয়স চার। তার সেরিব্রাল পালসি (মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত) রয়েছে। দুই শিশুরই বিশেষ খাবার প্রয়োজন।
যুদ্ধের আগে ইউসুফের ওজন ছিল ১৪ কেজি। এখন তা নেমে এসেছে ৯ কেজিতে। আমিরের ওজন ছিল ৯ কেজি, এখন ৬ কেজি।
সামাহ বলেন, এই শিশুদের খাবারে চিনি, দুধ, ফল লাগত। এখন কিছুই নেই। এমনকি ডায়াপারও নেই। সামান্য ময়দাও খুব কষ্টে জোগাড় করছি। যুদ্ধের আগে ওরা সুস্থ ছিল।
সোমবার গাজায় আরও ৯৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৩৯ জন। আল জাজিরার মতে, নিহতদের মধ্যে ২৯ জন ক্ষুধার্ত মানুষ ছিলেন, যারা ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। খাদ্যের অভাবে গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছেন ১৮০ জন। তাদের মধ্যে ৯৩ জন শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন মোট ৬০ হাজার ৯৩৩ জন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ২৭ জন।
এদিকে, গাজার চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে।
ডেমোক্র্যাট পার্টির কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা এই দাবি জানিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনপ্রণেতা রো খান্না এ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতারাও সই করেছেন। সম্প্রতি একই দাবি উঠেছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা-তেও।
নদীবন্দর/এএস