শেষ হলো অপেক্ষা। পাঠ করা হলো জুলাই ঘোষণাপত্র। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা যখন ঘোষণাপত্রটি পাঠ করছিলেন, পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন লাল পেড়ে কালো শাড়ি পরিহিত এক তরুণী। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, হাতে কিছু সাদা কাগজ। একটুখানি উপস্থাপিকা উপস্থাপিকা ভাব।
এদিন জুলাই ঘোষণাপত্র যেমন ছিল মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে, কৌতুহল জাগিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের পাশে দণ্ডায়মান সুদর্শনা ওই তরুণীও। কী তার পরিচয়? অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টার একেবারে পাশেই বা তিনি দাঁড়ানোর জায়গা করে নিলেন কোন যোগ্যতায়? এমন নানা প্রশ্ন, নানা কৌতূহল সামাজিক মাধ্যমজুড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই তরুণীর নাম সাবরিনা আফরোজ শাবন্তী। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের আপন বোন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গত বছরের ১৯ জুলাই মারা যান সৈকত। এদিন ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সৈকতের বোন শাবন্তী।
আরও অবাক করা বিষয় হলো- আজকের অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন হাজারো মনে কৌতূহল জাগানো ওই তরুণী। এসময় তার চোখের দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও বলিষ্ঠতা নজর কাড়ে উপস্থিত সবার।
সূচনা বক্তব্যে শহীদ ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে শাবন্তী বলেন, ‘এক বছর আগে ১৯ জুলাই আমার পরিবার যখন ভাইয়ের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে পায়, তখন তার মাথায় ছিল রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা ছিল, গান শট।’
তিনি জানান, ‘আমার ভাইয়ের উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। তার উচ্চতা নিয়ে আমার বাবা গর্ব করতেন। অথচ সেই উচ্চতাই আমার ভাইয়ের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
শাবন্তী বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার যখন দেখি, ‘আজ আমরা পুরো দেশের পরিবার হয়ে গেছি, তখন কিছুটা স্বস্তি বোধ করি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছিল, সামনে কোনো আলোর দিশা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন এই সফল গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা যেন কিছুতেই লক্ষচ্যুত না হই।’
এদিন বক্তব্য দেওয়ার আগে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঠিক পাশাপাশি হেঁটে মঞ্চে উঠছেন শাবন্তী। তখন মনে হচ্ছিল, তিনি দলটির কোনো কর্মী হবেন। পরে জানা যায় তার আসল পরিচয়।
নদীবন্দর/জেএস