যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, তিনি আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়েই এই বৈঠকের আয়োজন করা হবে। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, সম্ভাব্য চুক্তিতে ভূখণ্ডের অদলবদলের বিষয়টি থাকতে পারে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাতে জানা যায় , গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতাদের শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর আয়োজনে স্বাগত জানাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক করব। রাশিয়াকে দিয়েই শুরু করব।’ যদিও যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় নতুন কী পরিবর্তন এসেছে, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি। তার ভাষায়, ‘এটি খুব জটিল। তবে আমরা কিছু ফেরত পাব, কিছু অদলবদল হবে। উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হবে।’
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়াসহ দখলকৃত ভূখণ্ড রাশিয়াকে দেওয়ার যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, পুতিন শর্ত দিয়েছেন যে, ২০১৪ সালের পর থেকে রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু ভূখণ্ড ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে, পশ্চিমা সহায়তা বন্ধ করতে হবে এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা ত্যাগ করতে হবে।
পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় বৈঠক ঘিরে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য না হওয়ায় দেশটি আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না। এর আগে বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা ভাবা হলেও ট্রাম্প শুক্রবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়ে জানান, বৈঠক হবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরতম অঙ্গরাজ্য আলাস্কায়। এই অঙ্গরাজ্যটি রাশিয়ার বেরিং প্রণালী থেকে মাত্র ৮৮ কিলোমিটার দূরে।
এদিকে, ট্রাম্প যেদিন এই ঘোষণা দেন, সেদিনই রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে তার দেওয়া আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হয়, তবে কোনো সমঝোতা হয়নি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অব্যাহত হামলায় এবং আলোচনায় অনীহায় ট্রাম্পের হতাশা বাড়ছে। ২০১৯ সালের পর এটিই হবে ট্রাম্প ও পুতিনের প্রথম সরাসরি বৈঠক।
প্রথম মেয়াদে পুতিনের প্রতি নমনীয় অবস্থান নিলেও সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প ক্রমশ সমালোচনামুখর হচ্ছেন। গত সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার নতুন হামলাকে তিনি ‘ঘৃণ্য’ বলে নিন্দা করেন এবং হামলা বন্ধ না করলে নতুন নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ইতোমধ্যেই রুশ তেল কেনার কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে বাড়িয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির’ কথা জানালেও সময়সীমার শেষ দিন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকেই নতুন পদক্ষেপ বা ছাড়ের ঘোষণা আসেনি। বিশ্লেষকদের ধারণা, পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনা দীর্ঘায়িত করছেন, আর ট্রাম্পের অস্থির কূটনৈতিক অবস্থান যুদ্ধবিরতির সমীকরণে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেয়। ইতিহাসের পাতায় এটি ‘আলাস্কা পারচেজ’ নামে পরিচিত। এই বিশাল ভূখণ্ডটি যুক্তরাষ্ট্র কিনেছিল মাত্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
নদীবন্দর/এএস