রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল ও পিচ্চি রাজার মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মদিনা (২০) নামে এক নারী আহত হয়েছেন।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরের দিকে ২ নম্বর সেক্টরের জন্ডিস গলিতে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান। তিনি জানান, বুনিয়া সোহেল দুপুর থেকে পৌনে ২টার মধ্যে পিচ্চি রাজার একটি দোকানের শাটারের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দোকানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এ ঘটনায় পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মদিনা নামে এক নারী আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) জুম্মার নামাজের পরও তারা মাদক কারবারের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি মাদক কারবারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বুনিয়া সোহেল ও পিচ্চি রাজা গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এ দুই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আমরা দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেছি। পুলিশ যাওয়ার খবরে ক্যাম্প ফাঁকা হয়ে গেছে, কাউকেই পাওয়া যায়নি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
জেনেভা ক্যাম্পের জিয়াউদ্দিন জানান, গত শুক্রবারও মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে বুনিয়া সোহেল পিচ্চি রাজাকে উদ্দেশ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। বুনিয়া সোহেল মোটরসাইকেলে এসে প্রকাশ্যে ককটেল ফাটিয়ে আবার চলে যায়। আজ দুপুরেও শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল জন্ডিস গলিতে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে এক নারী আহত হয়েছে শুনেছি।
তিনি আরও জানান, পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেনেভা ক্যাম্পে ঢোকার আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। তারা বিভিন্ন জায়গায় সোর্স রাখে যাতে পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকলে তাদের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছায়। আমাদের ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের সঙ্গে জড়িত। তা না হলে অভিযানের খবর তারা আগে থেকে কীভাবে জেনে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন জানান, শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেলের নামে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় ৩টি হত্যা ও অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মাদকের ১৮টি মামলার আসামি তিনি। বুনিয়া সোহেল জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের আব্দুস সালামের ছেলে। পিচ্চি রাজার নামেও মাদক ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি এলাকা থেকে র্যাব বুনিয়া সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকমাস পরেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। জেল থেকে বের হয়ে আবারও মাদকের কারবার পরিচালনা শুরু করেন। সবশেষ চলতি বছরের ৪ জুন রাতে সেনাবাহিনী ও র্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে একটি ফার্মেসি থেকে বুনিয়া সোহেলের মাদক বিক্রির কোটি টাকার বেশি জব্দ করা হয়।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আরও জানান, বুনিয়া সোহেল আগে থেকেই ৭ নম্বর সেক্টরের হুমায়ুন রোড এলাকায় হেরোইন বিক্রি করেন। এখানে নতুন করে পিচ্চি রাজা ও মনু মিয়ার নেতৃত্বে ইমতিয়াজ হেরোইন ব্যবসা শুরু করেন। এই হিরোইন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বিক্রি করে আসছিলেন। এটা জেনেভা ক্যাম্পের নিত্যদিনের ঘটনা। মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
নদীবন্দর/জেএস