রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান ও এএসআই কামরুজ্জামানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
এই মামলার অপর আসামি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের যাবজ্জীবন দণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এই মামলায় আদালতে আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সরওয়ার আহমেদ, মো. আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এসময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক হোসেন জনি ও তার ভাই ইমতিয়াজকে সুমনকে চলে যেতে বলেন।
এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সুমনের ফোনে পুলিশ এসে জনি ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। এতে জনির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন একই বছরের ৭ আগস্ট মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এই মামলা ২০১৩ সালে হওয়া নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম মামলা।
এক পর্যায়ে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর বিচার শেষে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ।
সেই রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসান ও এএসআই কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অপর দুই আসামি পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত। দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামারুজ্জামান (তৎকালীন এএসআই) শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজাভোগ করে বেরিয়ে গেছেন।
এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জাহিদুর, রাশেদুল ও রাসেল ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। ২০২১ সালে হাইকোর্ট সেসব আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। গত ৯ জুলাই এসব আপিল হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
নদীবন্দর/জেএস