বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও তিনটি ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’ সই হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় এই চুক্তিগুলো সই হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের মালয়েশিয়া সফরের প্রথম দিনই এই ঐতিহাসিক সই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিন সকালে স্থানীয় সময় ৯টায় ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ড. ইউনূসের পরিচয় করিয়ে দেন। পরে দু’দেশের শীর্ষ নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের পরই চুক্তিসমূহ সই হয়।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে একটি পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সই হওয়া প্রথম ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’টি উচ্চশিক্ষা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত। এতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উতামা হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
দ্বিতীয় নোট অব এক্সচেঞ্জটি কূটনীতিক প্রশিক্ষণ খাতের উন্নয়ন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর ভিত্তি করে সই হয়। এতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তৃতীয় নোট অব এক্সচেঞ্জটি হালাল ইকোসিস্টেম নিয়ে। এতে দুই দেশের মধ্যে হালাল শিল্পে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে চুক্তি সই হয়। স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রী সেনেটর ড. জুলকিফলি বিন হাসান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
এছাড়া পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রথমটি ছিল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে। এতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ খালেদ বিন নরদিন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), পেট্রোলিয়াম পণ্য, সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে যৌথ সহযোগিতা বিষয়ে। এতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক মন্ত্রী দাতুক সেরি আমির হামজা বিন আজিজান এবং বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি ছিল দুই দেশের কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস) এবং বাংলাদেশের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে। এতে স্বাক্ষর করেন আইএসআইএস মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান দাতুক প্রফেসর ড. মোহদ ফাইজ আবদুল্লাহ এবং মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।
চতুর্থ সমঝোতা স্মারকটি ছিল তথ্যপ্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক সংযোগে সহযোগিতা নিয়ে। মালয়েশিয়ার মাইমোস সার্ভিসেস এসডিএন বিহাড এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই)-এর মধ্যে এই চুক্তি সই হয়। এতে স্বাক্ষর করেন মাইমোস সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফাউজি ইয়াহায়া এবং বিএমসিসিআই-এর প্রতিনিধি শাব্বির আহমেদ খান।
পঞ্চম ও শেষ সমঝোতা স্মারকটি ছিল মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআইএম) এবং বাংলাদেশের এফবিসিসিআই-এর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সহযোগিতা সংক্রান্ত। এতে স্বাক্ষর করেন এনসিসিআইএম-এর সভাপতি দাতো সেরি এন. গোবালাকৃষ্ণন এবং এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।
নদীবন্দর/জেএস